প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুদের বক্তব্য

গত ২৪ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তরের শেষ পৃষ্ঠায় ‘চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওয়াদুদ ফ্রিডম পার্টির নেতা, আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের দাবি’ শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে আমি নিম্ন সাক্ষরকারী এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ঐ সংবাদে আমার বিরুদ্ধে বিশেদাগার করা হয়েছে। অথচ আমার কোন বক্তব্য নেয়া হয়নি। উক্ত সংবাদে তারা যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তা মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত। আমার ও আমার পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। চাঁদপুর জেলার প্রতিটি মানুষ জানেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আমার এবং আমার পরিবারের আত্মত্যাগের কথা। আমি এই দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছি, আমার পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
অভিযোগকারীদের বক্তব্যের প্রতিবাদে জানাচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক-রশিদের কুড়াল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিযোগ পাগলের পলাপ ছাড়া কিছুই নয়। এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে তথ্য রয়েছে কারা সেই সময় কুড়াল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। আমি আজন্ম আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।
অমুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটভুক্ত ও মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কেননা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় কর্তৃক অনুমোদিত কমিটি মন্ত্রণালয়ে আবেদনকারী মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করেছেন। আমি চাঁদপুরের কখনো যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বে ছিলাম না। তাই আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পুরোটাই ভিত্তিহীন। এছাড়া মতলবের ঋষিকান্দি গ্রাম জ্বালানো, ধনাগোদা বেড়িবাঁধ ভাঙ্গাসহ যেসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাও কাল্পনিক।এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আদালতে যেসব মামলা ও চাঁদপুর জেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এম সফিউল্লাহ সাহেবকে জড়িয়ে যে মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ভিত্তিহীন। কেননা যেই সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এর আগেই তিনি ইন্তেকাল করেছেন। বর্তমানে মরহুম এম সফিউল্লাহ সাহেবের মেয়ে সাজেদা সুলতানা কাকন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনিও এই মিথ্যাচারের তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ঐ সংবাদেই লেখা হয়েছে আমার সব ভাই ও পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পত্রিকায় আনীত অভিযোগে জনৈক হানিফ পাটওয়ারী ও শহীদুল আলম রব যে অভিযোগ করেছেন তার শুনানী গত ২৪ অক্টোবর ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়। সেই শুনানীতে একটি অভিযোগও প্রমাণিত না হওয়ায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাননীয় মন্ত্রীর কাছে তাদের বিচার দাবি করেছেন।
ঐ সংবাদের নেপথ্য বক্তব্য প্রদানকারী হানিফ পাটওয়ারী যুদ্ধকালীন সময়ে শ্রেণিসংগ্রাম হত্যা করার নামে অসংখ্য আওয়ামী লীগ, প্রগতিশীল ও ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ীদের হত্যা করে ধন-সম্পদ লুট করেছে। চাঁদপুর সদরের বিএলএফ’র প্রথম কমান্ডার শহীদ জাবেদকেও হত্যা করেন। এছাড়া চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়া এলাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে তাদের সম্পদ লুট করে নিয়েছেন। ১৯৭৪ সালে এ ধরনের উগ্রপন্থীদের বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে ওই সময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অস্ত্রসহ হানিফ পাটওয়ারীকে গ্রেফতার করে স্থানীয় টেকনিকেল হাইস্কুল ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে আরো অস্ত্রের সন্ধানে সামরিক কায়দায় জিজ্ঞাসাবাদকালে তার পা ভেঙ্গে যায় এবং মুখ মন্ডল বাকা হয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে মৃত ভেবে তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তার অপর সঙ্গী শহীদুল আলম রব ১৯৯১ সালে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে অর্থ ঋণের দায়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়।
এছাড়া মতলব মোহনপুর এলাকায় কথিত আছে সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রমের পিতা তৎকালীন (১৯৭৩ সাল) নাসিরারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) মো. আলী আহম্মদকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি সর্বহারা বাহিনীতে যোগ দিয়ে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা হামলা, লুটপাট, মানুষের বসতবাড়িতে লুটপাট ও আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তিনি মতলব থেকে পালিয়ে আত্মগোপন করেন।
আমি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। দেশ ও সমাজের জন্য আমার ও আমাদের পরিবারের অনেক দৃশ্যমান অবদান রয়েছে। চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন এলেই এমন একদল বাহিনী রয়েছে যারা আমার সাথে নির্বাচনে অংশ নিতে এসে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও চাঁদপুরবাসীকে বিভ্রান্তির চেষ্টা করে। তারই অংশ হিসেবে এই ধরনের একটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক সংবাদ যুগান্তরে প্রকাশ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।