কোরবানির পশুকে ওষুধ দিয়ে মোটা-তাজা করে কিছু অর্থলোভী

এস এম সোহেল
দেশি গরুর চাহিদা দিন দিন বেড়েছে। দেশীয় পদ্ধতিতে জেলার চাষিরা গরু মোটাতাজা করে, তাই এ জেলার গরুর চাহিদা বেশি। এসব গরুর মাংসের চাহিদাও রয়েছে বেশ। প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার খামারি ও কৃষকেরা গরু মোটাতাজা করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োগে গরু-মহিষ মোটাতাজা করেন কিছু অসাধু অর্থলোভী খামারি। বেশি দামে পশু বিক্রির জন্য খামারিরা এ পন্থা অবলম্বন করেন।
অন্যদিকে গরু মোটা-তাজাকরণের নিষিদ্ধ ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ওষুধের ফার্মেসি থেকে শুরু করে হাট-বাজারে। সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন অসাধুরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে স্টেরয়েডের উপাদান ঢুকে। এতে কিডনির সমস্যাসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্তের আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের মধ্যে পশুকে ডেক্সামেথাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন খাওয়ানো হয় বেশি।
এ ধরনের ওষুধ খেয়ে গরুগুলো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে মোটাতাজার বিপরীতে অনেক গরুর মৃত্যু হচ্ছে। এতে লাভের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক খামারি। কিছু খামারির ধারণা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ পশু মোটাতাজা করতে সহায়ক। তবে তারা এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানেন না। আবার অনেক খামারি জেনেই এ পন্থা অবলম্বন করছেন। যাতে পশু মোটাতাজা হলে কিছু বাড়তি টাকা পান।
চাঁদপুর পুরাণ বাজারের ৫নং খেয়াঘাটস্থ মিডেল প্লাস এ্যাগো প্রজেক্ট খামারি শাওন পাটওয়ারী বলেন, দীর্ঘদিন পশুপালন করছেন। তিনি কোরবানি উপলক্ষে প্রতিবছর চরাঞ্চলের দেশী প্রজাতির গরু আনেন। এগুলো প্রায় বছর খানেক লালন-পালন করে বিক্রি করেন। কোরবানির হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে এ বছরে ৬টি গরু আনা হয়েছে। আমরা গরুকে স্বাভাবিক খাদ্যের পাশে পুষ্টিকর খাবার ভুট্টা ও ফিড খাওয়ানো হয়। আমার এছাড়া অন্য কোন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োগে করি না।
স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োগে বিষয়ে বলেন, আমি মনে করি কোন প্রকৃত খামারিরা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন প্রয়োগ করে না। সিজনাল (৩ মাসের জন্য) ব্যবসায়ীরা ঐসব ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। ঐসব গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে ভয়াবহ রোগ হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নতুন বাজারের আরেক খামারি বলেন, গত বছর এক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রলোভনে অনেকে এ জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয় গরুকে। খাওয়ানোর পর দ্রুত সময়ের মধ্যে গরুর শরীর মোটা হয়েছিল। এতে করে তারা কিছু টাকা বেশি পেয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা জানান, সংকটাপন্ন জীবন বাঁচাতে ওষুধ হিসেবে অনেক সময় স্টেরয়েড দেয়া হয়। কিন্তু ভালো পশুকে এ ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। তবে এ প্রবণতা কমে এসেছে। মানুষ আগের তুলনায় সচেতন। পাশাপাশি যেহেতু অনেক সময় ওষুধ খাওয়ানোর পর অনেকের গরু মারা গেছে, তাই লোকসানের ভয়ে খামারিরা ঝুঁকি নিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, এ ধরনের গরু সারাক্ষণ নীরব থাকে, নাড়াচাড়া খুবই কম করে। গরুর পায়ুপথে রক্তের দেখা মিলতে পারে। যেহেতু ওষুধ খাওয়ানো বেশিরভাগ গরুর পাকস্থলীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, এজন্য রক্ত পায়খানা হয়।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম কাউছার হিমেল বলেন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও ইনজেকশন খাওয়ানোর ফলে পশুর কিডনি ও লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। ফলে শরীর থেকে পানি বের হতে পারে না। ওই পানিগুলো সরাসরি পশুর মাংসে যায়। এ কারণে আকৃতিগতভাবে গরুকে মোটা মনে হয়। তবে আসলে ওইগুলো মাংস নয়। জবাইয়ের পর পানি বের হয়ে গেলে ওই গরুর মাংস কমে যায়। এজন্য অনেক কোরবানি দাতাকে হাঁস-ফাঁস করতে দেখা যায়।

১০ জুলাই, ২০১৯।