চাঁদপুরে ১ চেয়ারম্যান প্রত্যাহার, ১১ ভাইস চেয়ারম্যানের মনোনয়নপত্র বাতিল

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে

মানিক দাস
তৃতীয় ধাপে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাঁদপুর জেলার ৭টি উপজেলার নির্বাচনে গত বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন পৃথকভাবে ২৬ জন চেয়ারম্যান, ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন।
যাচাই-বাছাইকালে ৭ উপজেলা থেকে পুরুষ ও মহিলা ১১ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ঋণ খেলাপী, তথ্য গোপন, ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর ভুল এবং ৫ জন সমর্থকের মধ্যে স্বাক্ষর না থাকার কারণে প্রাথমিকভাবে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। একই সাথে মতলব উত্তর উপজেলায় জাতীয় পার্টি থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মো. সোহরাব হোসেন মিয়াজীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে তার প্রার্থীতার প্রত্যাহারের আবেদনটি জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা প্রদান করেছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ জন চেয়ারম্যান, ৪ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে মো. জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার সমর্থিত ৫ জনের মধ্যে ১ জনের স্বাক্ষর না থাকায় ও বিদেশ চলে যাওয়ায় তার মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শওকত ওসমান তার বাতিল ঘোষণা করেন। ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। তারা হলেন- চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম দেওয়ান, জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাড. মোহাম্মদ মহসিন খান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান ভূঁইয়া ও কাজী মো. ইব্রাহিম জুয়েল। মনোনয়নপত্র যাচাইয়ে বৈধ পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- মো. আইয়ুব আলী বেপারী, মো. হারুনুর রশিদ হাওলাদার ও জাকের পার্টির প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- আবিদা সুলতানা, শিপ্রা দাস ও আয়েশা রহমান।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। ৯ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ২ জনের মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল বলে গন্য হয়েছে। মো. জাকির হোসেন ও মো. নাছির উদ্দিন যেসব ভোটারদের তালিকা তিনি প্রদান করেছেন তার মধ্যে জাকির হোসেনের পক্ষে ১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই বিদেশ চলে গেছেন এবং নাছির উদ্দিন ভোটারদের যে তালিকা প্রদান করেছেন সেখানে ৫ জন ভোটারের মধ্যে ৩ জন ভোটার তার বিপক্ষে অবস্থান করছেন। এ তথ্য গোপনের জন্য এই ২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। অপরদিকে ৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম রোমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, আব্দুল গণি, আবু সাহেদ সরকার ও সফিকুর রহমান মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- আবু সুফিয়ান, ওয়াহেদুর রহমান, তছলিম আহমেদ, এনামুল হক পাটওয়ারী, এমরান হোসেন, কামরুজ্জামান পাটওয়ারী, পাভেল হোসেন পাটওয়ারীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোসা. সেলিনা আক্তার, মাজুদা বেগম, রিনা নাসরিন, হালিমা বেগম, রেবেকা সুলতানা ও রেহেনা বেগম।
মতলব উত্তর উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ২ জন চেয়ারম্যান মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৫ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্য থেকে ঋণ খেলাপীর দায়ে ২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। মোতাহার হোসেন খানের সেনপাড়া অগ্রণী ব্যাংকে ঋণ খেলাপী ও জামাল হোসেনের ঢাকার স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ঋণ খেলাপী থাকায় তাদের মনানয়নপত্র রিটার্নিং অফিসার প্রাথমিকভাবে বাতিল ঘোষণা করেছেন। অপর প্রার্থীরা হলেন- মো. আলাউদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও মো. সেলিম মিয়ার প্রার্থীতা বৈধ হয়েছে। ৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১ জনের মনোনয়ণপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল হয়েছে। পারভিন আক্তার নামের ওই প্রার্থী ২৫০ জন ভোটারের যে তথ্য দিয়েছিল তার মধ্যে ৫ জন ভোটারের তথ্য গড়মিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন- তাহমিনা সুলতানা, শাহীনা আক্তার, পারভীন কবির ও নিলুফা আক্তার।
এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী মো. সোহরাব হোসেন মিয়াজীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলেও তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহারের আবেদন জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা প্রদান করেছেন। এতে করে মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম.এ কুদ্দুছ এখন বিজয়ের পথে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ১ জন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্রটি বৈধ হয়েছে। এএইচএম গিয়াস উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। ৬ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ঋণ খেলাপীর দায়ে ১ জনের মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। মোস্তফা কামাল রনি ওছমানি নগরে ন্যাশনাল ব্যাংক ঋণ খেলাপী ও পূবালী ব্যাংকে ডেবিট কার্ডের খেলাপী থাকায় তার মনোনয়নপত্রটি প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- মো. ফারুক পাটওয়ারী, এম.এ আজিজ বাবু, মো. বাদল ফরাজি, মো. মুবিন সুজন, মেহেদী হাসানের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা প্রদান করেছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে ১ জনের মনোনয়নপত্র ঋণ খেলাপীর দায়ে প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। তিনি হলেন হামিদা জিনাত। অপর ২ প্রার্থী ফেরদৌসি বেগম ও ফাতেমা আক্তারের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ২ জন চেয়ারম্যান, ৪ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে। সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গাজী মাইনুদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজাদ হোসেন মিরনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন খায়রুজ্জামান, গোলাম ফারুক মুরাদ, মজিবুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী খাদিজা বকাউল, শিউলি আক্তার, মুক্তা আক্তার, মির্জা শিউলি পারভীন ও পারভীন ইসলাম এদের সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
কচুয়া উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ৭ জন চেয়ারম্যান, ৩ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের প্রার্থী প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। আমেনা আক্তার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সেখান থেকে অব্যাহতি না নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। যার ফলে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল বলে গণ্য হয়।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া ৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহাজাহান শিশির, স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন কবির, জিয়াউর রহমান হাতেম, আইয়ুব আলী পাটওয়ারী, সোহরাব হোসেন, সৈয়দ আব্দুস জব্বার বাহার, ফয়েজ আহমেদ স্বপন। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন- শাহজালাল, মাহবুব আলম ও শাহপরান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সালমা সহিদ, শ্যামলী বেগম ও সুলতানা খানম।
শাহরাস্তি উপজেলায় পরিষদ নির্বাচনে ৫ জন চেয়ারম্যান, ৬ জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ও ৪ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্য থেকে ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মো. আনোয়ার হোসেন শাহরাস্তি পৌরসভার ঠিকাদার। তিনি তার ঠিকাদারী হস্তান্তর না করেই প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে তোফায়েল ইসলাম ইরান ঋণ খেলাপীর দায়ের তার প্রার্থীতা বাতিল করা হয়। সহকারী রিটার্নিং অফিসার হেলাল উদ্দিন এ ২ জন প্রার্থীকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দিলে ওই সময়ের মধ্যেই তারা তাদের কাগজপত্র সংশোধন করে জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া ৫ জন চেয়ারম্যান হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফরিদ উল্লাহ চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুকবুল হোসেন, খিজির হায়দার, ইমদাদুল হক ও বাবুল মিজি। পুুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন সাইফুল ইসলাম, ওমর ফারুক, সেলিম খান, ইব্রাহিম খলিল।
মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহনাজ আক্তার, হাসিনা আক্তার, মোহসেনা আক্তার ও কামরুন নাহার।
যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে সেইসব প্রার্থীরা ১ মার্চ থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আপিল করতে পারবেন। আগামি ৪ মার্চ ওই আপিলের শুনানী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।