চাঁদপুর সদর হাসপাতালে টিআইবি’র মতবিনিময়


হাসপাতালের সমস্যা সমাধান করা হবে
…. আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
‘স্বাস্থ্যসেবায় চাই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনঅংশগ্রহণ’ এই শ্লোগান নিয়ে হাসপাতাল প্রদত্ত সেবায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সেবার সার্বিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মানসম্মত সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরনে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভা গতকাল বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাক-চাঁদপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম দেওয়ান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ গঠন করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার যা সামর্থ আছে তার চেয়ে বেশি যদি আমার প্রয়োজন হয় তাহলে সমস্যাতো হবেই। কাজে ফাঁকি দেওয়া একটা দুর্নীতি। তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে হাসপাতালের অনেকগুলো সমস্যার কথা শুনেছি। আমি আশা করছি সবগুলো সমস্যা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে আলোচনা করে সমাধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমি শুনেছি ন্যায্যমূল্যের ঔষধের দোকানে যে হারে কম নেওয়ার কথা সে হারে নিচ্ছে না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়কের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি তত্ত্বাবধায়কের উদ্দেশে বলেন, হাসপাতালের খাবারের মান নিয়েও আমি অনেক কথা শুনেছি। সরকারি নিয়মানুযায়ী খাবার না দিলে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আমি আপনাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবো। সরকারি বলেন, বেসরকারি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বলেন অনেকেই দাম্ভিকতা দেখায়। আমাদের এই দাম্ভিকতা পরিহার করতে হবে।
তিনি তত্ত্বাবধায়কের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনি হাসপাতালের আজ অনেকগুলো সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করার জন্য আনসার বাহিনী নিয়োগ দেয়া। আমি এ ব্যাপারে আগামি আইন-শৃংখলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধান করবো। পাশাপাশি হাসপাতালের সেবা প্রদানে নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফরা যাতে রোগীদের সাথে ভালো আচরণ করে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে কেউ যদি হাসপাতালে এসে কোন সমস্যার সৃষ্টি করে আমাকে জানাবেন আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য যেভাবে কাজ করছেন আমরা আশা করছি এদেশ একদিন দুর্র্নীতিমুক্ত হবেই। তিনি এধরণের একটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করার জন্য সনাককে ধন্যবাদ জানান।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, এই হাসপাতালটি ২০০৫ সালে ২০০ শয্যার ছিলো। ২০০৯ সালে তা ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল, অবকাঠামো ও উপকরণ ২০০ শয্যার মতোই রয়েছে। হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিতে জনবল সংকট দূরিকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২.২৭ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের তিনটি বিল্ডিং ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জন্য খুবই অপ্রতুল। ফাউন্ডেশনের কারনে ভবনটি উর্ধ্বমুখী করা যাচ্ছে না। চারপাশে জায়গা না থাকায় বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি হাসপাতালের সেবা সম্পর্কিত বহু তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, প্রতিদিন আউটডোর, ইনডোর (ভর্তি রোগীসহ), ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে প্রায় ২০০০জন রোগী সেবা নিয়ে থাকে। হাসপাতালে মাঝে মধ্যে অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়ত বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে এক্ষেত্রে হাসপাতালের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ না হোক অন্তত আনসার বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে তিনি আনসার বিভাগসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তিনি আরো বলেন, দালালের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া তিনি হাসপাতালের জনবল ঘাটতিজনিত সমস্যা, হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিরাপত্তাহীনতা, হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য, হাসপাতালে বিদ্যুতের সমস্যা, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকট, হাসপাতালের অবকাঠামোগত সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি এব্যাপারে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত হয়েছেন সকলের একটাই উদ্দেশ্য ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান কিভাবে আরও উন্নীত করা যায়। চাঁদপুরে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই সুন্দর। সবার মধ্যে হ্রদ্দতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিতে নাগরিক সমাজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আর সেই দায়িত্ববোধ থেকে হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সনাকের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সনাক-টিআইবি চাঁদপুরে মূলত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি ও জলবায়ু এই ৫টি খাত নিয়ে কাজ করছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর। সনাক মূলত দু’টি পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। হাসপাতালের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও তারা খুবই ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সদর হাসপাতালের সেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শুধু চাঁদপুর নয়, আমাদের পাশবর্তী জেলা লক্ষীপুর ও শরীয়তপুর থেকে বহু রোগী এই হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে থাকে। সেবা প্রদানে সদর হাসপাতালের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরনে কি কি করণীয় এই কারনেই আমাদের আজকের এই আয়োজন। হাসপাতালের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলেই এগিয়ে আসবেন এই প্রত্যাশা করছি। তিনি মতবিনিময় সভায় আসার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
সভার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহু সমস্যার মধ্যেও খুবই আন্তরিকভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি ডাক্তারদের সময়ের প্রতিও খোয়াল রাখতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। তিনি হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি মতবিনিময় সভায় আসার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান।
হাসপাতালে মানসম্মত সেবা প্রদানে চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয় শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিএমএ’র সভাপতি ডা. সৈয়দ মো. নুরুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুন্নবী মাসুম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার, আত্মনিবেদীতা মহিলা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডা. এমএম মুস্তাফিজুর রহমান, গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. আলী হোসেন মজুমদার, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ড. কাজী হাসেম, গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএমসি সভাপতি মোশতাক হায়দার চৌধুরী, সেন্ট্রাল ইনার হুইল ক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম, চাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ফরিদা ইলিয়াছ, ইয়েস গ্রুপের দলনেতা জয় ঘোষ প্রমুখ।
সনাক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডা. পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেনের যৌথ পরিচালনায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটওয়ারীসহ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সনাক সদস্যবৃন্দ, সেবিকাবৃন্দ, চাঁদপুর সেন্ট্রাল ইনার হুইল ক্লাবের নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ড্স সদস্য এবং টিআইবি’র কর্মীবৃন্দ।

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।