ফরিদগঞ্জের বরখাস্ত হওয়া শিক্ষক মফিজের দৌরাত্ম্য


কলেজে উপস্থিত না হয়েও ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা বেতন গ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার
ফরিদগঞ্জ উপজেলা ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক মো. মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী কার্যক্রমে অভিযুক্ত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কোন ধরনের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে সে প্রতিষ্ঠান থেকে খরপোষের টাকা গ্রহন করে যাচ্ছেন। এই পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ ৮১ হাজার ১৯৬ টাকা নিয়েছে এই শিক্ষক। তার মধ্যে নূন্যতম শিক্ষকের গুনাবলী না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্নসহ যাবতীয় অপরাধমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর দায়িত্বরত সকল অধ্যক্ষের সাথে খারাপ আচরণ ও নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙের জন্য কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেয়া হয়েছে তাকে। এমনকি তিনি রাজনীতিমুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি প্রবেশ করানোসহ উপাধ্যক্ষকে শারিরীকভাবে নির্যাতনের মত জঘন্য কাজও করেছেন। বর্তমানে এই শিক্ষক সমবায়ের নাম করে সুদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।
সরেজমিন কলেজের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে ও শিক্ষক মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মফিজুল ইসলাম ২০০০ সালে উল্লেখিত কলেজে নিয়মানুসারে যোগদান করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের রুটিন সময় ও বাহিরে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হলে বেঁকে বসেন শিক্ষক মফিজুল ইসলাম। শুরু করেন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। প্রতিষ্ঠান পরিপন্থি কাজ করায় তার বিরুদ্ধে ১১ বার কারণ দর্শণোর নোটিশ প্রদান করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কয়েকটির জবাব সন্তোষ জনক হয়নি, কোনটির জবাব তিনি অদ্য পর্যন্ত দেননি।
তার অনিয়মের কারণে কলেজ গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে প্রতিটি প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। তাকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে চলার জন্য সুযোগও দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিক প্রমাণিত, হুমকির জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করণ, শিক্ষা অধিদপ্তর ও জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার জন্য কমিটি করে দিয়েছেন। সেই কমিটি যাতে করে তদন্ত না করতে পারেন, সে জন্য মফিজুল ইসলাম অর্থ ও লোক দিয়ে এক সদস্য কমিটির লোক তদন্ত করান। যা কোনভাবেই নিয়মনীতির মধ্যে নেই। বরং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় যে তদন্ত কমিটি করেছেন সেই কমিটি যাতে করে কোন তদন্ত করতে না পারে, তার বিরুদ্ধে সর্বপরি ব্যবস্থা করেছেন। তিনি তদন্ত কমিটির আহবায়ক চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, কলেজের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন করেন। সেই রীট পিটিশনের জবাব প্রদান করেন আহ্বায়ক কমিটি। ফলে উচ্চ আদালতে তার দায়ের করা রীট টিটিশন স্থগিত হয়ে যায়।
কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মনির চৌধুরী জানান, মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া ওরফে মিলন কর্তৃক কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও কলেজের যে কাউকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করায় ২০১৫ সালের ১ আগস্ট তার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী করা হয়। তার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ পাওয়া যায়, সেইসব অভিযোগের তদন্ত কমিটি হয়। কলেজের আভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটির আমি আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। দায়িত্বপালন কালে অর্থাৎ তদন্ত চলাকালীন সময়ে কলেজে প্রকাশ্যে মফিজুল ইসলাম ও বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রকৃতি লোকজনসহ আমার উপর হামলা চালানো হয়। এতে আমি আহত হই। পরে সহকর্মীরা ওই অবস্থায় উদ্ধার করেন আমাকে। কলেজের শিক্ষার্থীদের বেতন বৃদ্ধিতে উষ্কানিদাতা হিসেবে মফিজুল ইসলাম প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কলেজ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তিনি আরো জানান, মফিজুল ইসলাম অপরাধমূলক কার্যক্রম শুধুমাত্র কলেজেই সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং তিনি নিজ বাড়ীতে সম্পত্তিগত বিরোধ নিয়ে মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি ক্ষতিগ্রস্থ করেন। ২০১৮ সালের মে ও জুন মাসে তার এসব বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ, দৈনিক ইলশে পাড় ও দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠে সংবাদ প্রকাশ হয়। তিনি বরখাস্ত কালিন সময়ে খরপোষের টাকা গ্রহন করছেন একদিকে। অপরদিকে সমবায়ের নামে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের ব্যবসা। হিমাচল বহুমূখী সমবায় সমিতি লিঃ নামে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া। এই সাইনবোর্ড দিয়ে স্থানীয়ভাবে সুদী মিলন নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন। মানুষ ঋণের টাকা পরিশোধ করার পরও তিনি আবার টাকা দাবী করে মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন। এমন উদাহারণ অনেক পাওয়া যাবে।
কলেজের পরিসংখ্যান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, মফিজুল ইসলামের মধ্যে নূন্যতম শিক্ষকের গুনাবলী নেই। সে যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন বিপদজনক ব্যাক্তি। সে এই কলেজে প্রথম রাজনীতি প্রবেশ করানোর চেষ্টা করেন এবং কলেজের শিক্ষককে শারিরীকভাবে নির্যাতন করেন। যা অত্যান্ত দুঃখজনক বলে আমি মনে করি।
উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক ফরিদ আহম্মেদ জানান, তার আগে আমি এই কলেজে যোগদান করেছি। আমাদের কলেজে নিয়ম শৃঙ্খলা ভঙের কোন নজির ছিলো না। মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া কলেজে প্রথম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। যা আমাদের কলেজের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে সে এধরনের কাজ করতে পারে না।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হলে এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, তিনি সামিয়ক বরখাস্ত হয়েছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তার একাউন্টে বেতন দেয়ার কারণে তিনি গ্রহণ করেন। তিনি কলেজে উপস্থিতি (হাজিরা) দেয়ার কথা থাকলেও দেননি এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কলেজের যাওয়ার পরিবেশ নেই বলে যাই না। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে সেগুলো তিনি জবাব দিয়েছেন এবং শিক্ষককে মাধররের ঘটনাসহ থানায় যে সব জিডি হয়েছে সেগুলোর তদন্ত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার বরখাস্ত করার বিষয়ে এক সদস্য কমিটির তদন্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন করেছি। বর্তমানে তিনি কলেজে উপস্থিত না হয়ে সমবায় সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এমন প্রশ্ন করলে এত কথার উত্তর দিবে পারবো না বলে ফোন কেটে দেন।
কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোহেববুল্লাহ খান বলেন, আমি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগাদানের পূর্বেও সকল অধ্যক্ষের সাথে মফিজুল ইসলাম খারাপ আচরণ করেছেন। সে প্রতিষ্ঠান বিরোধী কার্যক্রমে লীপ্ত থাকায় তাকে সকল অধ্যক্ষই কারণ দর্শাণোর নোটিশ দিয়েছেন। সে কলেজে প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে নিষেধ করা হলে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে যাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা যায়, সে এজন্য উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন করে। কিন্তু উচ্চ আদালত তা স্থগিত করে দেয়। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো প্রমাণ করা এখন শুধুমাত্র সময়ে ব্যাপার।