ফসল সুরক্ষার কারেন্ট জালে মরছে পাখি


মনিরুল ইসলাম মনির
পাখির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কারেন্ট জাল দিয়ে সবজি ক্ষেত ঘিরে রেখেছেন কৃষকরা। কিন্তু এ জাল এখন পাখিদের মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির বহু পাখি মারা পড়ছে। উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর হাজার হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ হয়। এর মধ্যে বেগুন ও টমেটোর ক্ষেতে পাখির উপদ্রব বেশি হয়।
ফসল বাঁচাতে কৃষকরা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেন ক্ষেতের মধ্যে খুঁটি পুঁতে বিভিন্ন রঙের ফিতা টানানো, টিনের ঘণ্টি, কাকতাড়–য়া ইত্যাদি। এসব দিয়েই এতদিন চলছিল। কিন্তু এবার বেশিরভাগ কৃষক নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে পুরো ক্ষেত ঢেকে দিয়েছেন। এতেই বেধেছে বিপত্তি। সূক্ষ্ম সুতার জাল না দেখে ক্ষেতে নামতে গিয়ে আটকা পড়ছে বক, শালিক, ঘুঘু, বাদুর, চড়–ইসহ নানা প্রজাতির পাখি। ডানা ঝাঁপটাতে গিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মরে পড়ে থাকছে।
মোহনপুর ইউনিয়নের চরওয়েস্টার গ্রামের কৃষক বাবলু বলেন, তার ৩ বিঘা জমিতে বেগুন ভালোই হয়েছে। কিন্তু পাখিরা এসে বেগুন ঠুকরে ছিদ্র করছে। সেই বেগুন বাজারে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কারেন্ট জাল দিয়েছেন। নিষিদ্ধ এ জাল কীভাবে সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন কারেন্ট জাল কিনতে অনেক টাকা লাগে। জেলেদের কাছ থেকে পুরনো জাল কিনেছেন তিনি। এতে বিঘা প্রতি প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার মতো অনেক কৃষক কারেন্ট জাল দিয়ে ফসল রক্ষা করছেন বলে জানান তিনি। তবে জালে আটকা পড়ে পাখি মারা গেলেও এ ব্যাপারে সব কৃষককেই নির্বিকার দেখা গেছে।
অবশ্য এখলাছপুর ইউনিয়নের চরকাশিমের কৃষক ইব্রাহিম গাজীর মতো কৃষকও আছেন, যারা পাখির উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন। তিনি বলেন, পাখি ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলের উপকার করে। তাই কারেন্ট জাল পদ্ধতি ব্যবহার করা ঠিক না। বিকল্প হিসেবে তিনি ক্ষেতের চারদিক ও মাঝখানে ঘন ঘন খুঁটি পুঁতে নানা রঙের পাতলা ফিতা টাঙিয়ে দিয়েছেন। বাতাসে ফিতাগুলো উচ্চগ্রামের ভন ভন শব্দ সৃষ্টি করে। তখন পাখিরা পালিয়ে যায়। পাখিদের ক্ষতি হয় ক্ষেত সুরক্ষায় এমন ব্যবস্থা না নেওয়ারই পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, পাখি প্রকৃতি ও কৃষকের বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অনেক বেশি। তারা যতটুকু না ফসলের ক্ষতি করে, ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে তার চেয়ে অনেক বেশি উপকার করে।
অনেক কৃষক ফসল রক্ষায় কারেন্ট জাল ব্যবহার করছেন এমন তথ্য শুনেছেন উল্লেখ করে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, খোঁজ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। ক্ষতিকর এ পদ্ধতি ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এরপরও যদি জাল ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে কারেন্ট জাল অবশ্যই না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, পাখি ও ফসল দু’টিই যাতে রক্ষা পায়, সে বিষয় নজর দিতে হবে। এমন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে, যাতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হন আবার পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পায়।