মতলব দক্ষিণে ২২ হাজার রোগীকে সেবা প্রদান

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ মাসে


মেহেদী হাসান সরকার
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ৩ মাসে ২২ হাজার ৩৬ জন রোগীকে প্রসূতি সেবা, জরুরি সেবা ও অন্তঃ ও বহির্বিভাগে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। চিকিৎসা পেয়ে এ সরকারি হাসপাতালের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে ও চিকিৎসা ব্যয়ভার কম হওয়াতে গরিব রোগীরা বেশি উপকৃত হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসা সেবার জন্য গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১ হাজার ২৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এখানে সামান্য খরচ মিটিয়ে ২শ’ ২৯ জন মায়ের সিজারিয়ান ডেলিভারী ও ১শ’ ১৭ জন মায়ের স্বাভাবিক ডেলিভারী করা হয়। এর মধ্যে জানুয়ারী মাসে সিজারিয়ান ডেলিভারী ৮৭ জন ও স্বাভাবিক ডেলিভারী ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে সিজারিয়ান ডেলিভারী ৭০ জন ও স্বাভাবিক ডেলিভারী ৩০ জন এবং মার্চ মাসে সিজারিয়ান ডেলিভারী ৭২ জন ও স্বাভাবিক ডেলিভারী হয় ৪৯ জন মায়ের হয়েছে। আর এ ৩ মাসে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু শূন্যের কোঠায় ছিল। এছাড়া ৬শ’ ৭৮ জন রোগী প্রসূতি বিভাগে অন্যান্য সেবা গ্রহণ করেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে গত ৩ মাসে ৫ হাজার ২শ’ ৪৮ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১ হাজার ৮শ’ ২২ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ৫শ’ ৮৫ জন ও মার্চ মাসে ১ হাজার ৮শ’ ৩০ জন রোগী অন্তঃবিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা পেয়েছে। তবে এখানে মৃত্যু শূন্যের কোঠায় ছিল।
জানা যায়, হাসাপাতালের বহির্বিভাগে আগত রোগী সবচেয়ে বেশি। গত ৩ মাসে ১৪ হাজার ৫শ’ ৫ জন রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৯শ’ ১১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ হাজার ১শ’ ৭২ জন ও মার্চ মাসে ৫ হাজার ৪শ’ ২২ জন রোগী চিকিৎসা সেবা পেয়েছে।
দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চল থেকে আসা রোগীরা এখানকার ডাক্তারদের চিকিৎসা ও পরামর্শে আগের থেকে বেশি সুফল পাচ্ছে। যার ফলে গ্রামের সাধারণ মানুষ হাসপাতালের ডাক্তারদের চিকিৎসা নির্ভর হচ্ছে। এতে গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারদের অপচিকিৎসা কমে আসছে। এছাড়াও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গত ৩ মাসে ২ হাজার ২শ’ ৯৩ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৭শ’ ২১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৭শ’ ১১ জন ও মার্চ মাসে ৮শ’ ৬১জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। যার ফলে বিভিন্ন ফার্মেসী ব্যবসায়ী ও হাতুড়ে ডাক্তারের দৌরাত্ম্য কমে আসছে।
প্রসূতি বিভাগের সেবা নিতে আসা ইসলামাবাদ গ্রামের রহিমা, ফরাজিকান্দির সানজিদা, টরকি গ্রামের কাকলি আক্তার, আশ্বিনপুরের রিনা জানান, এ হাসপাতালে সিজারিয়ান ব্যবস্থা থাকায় আমাগো লইগা বড় উপকার হইছে। এখানে নাম-মাত্র খরচে ভালো সেবা পাইতাছি, না অয় অন্য প্রাইভেট হাসপাতালে হাজার হাজার টাকা লাগতো। আবার সঠিক সময়ে ডাক্তার না পেয়ে মা ও শিশুর মৃত্যুর মতো র্দূঘটনাও ঘটতে পারতো।
কদমতলি গ্রামে জাকির মোল্লা, ফতেপুর গ্রামে মজিবুর রহমান, মাইজকান্দির আমেনা বেগম জানান, হাসপাতালের পরিবেশ খুবই সুন্দর। মনে হয় প্রাইভেট হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে পেরেছি। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ডাক্তার এবং নার্স আপাদের সেবায় আমরা খুশি। শুনছি অনেক ডাক্তার নাই। সবাই থাকলে ডাক্তারেগো কষ্ট কম অইতো।
এ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের গাইনি ও সার্জন ডা. নুসরাত জাহান মিথেন বলেন, মাতৃ স্বাস্থ্যের জন্য কমপ্রেহেনসিভ যত কেয়ার আছে তা এখানে দেয়া হয়। প্রসূতিপূর্ব ও পরবর্তী সকল ধরনের ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও ব্যবস্থাপনা দেয়া হয়। সব কার্যক্রম সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে একজন অজ্ঞানবিদ (এন্সেথেসিয়াসিস্ট) না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবকল্পনা কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মাহাবুবুর রহমান বলেন, মতলব সেতু হওয়ায় যোগাযোগ সহজ ও হাসপাতালের সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারণে মতলব উত্তর-দক্ষিণসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। এছাড়া চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক পাওয়া ও অবকাঠমো ব্যবস্থা ভাল থাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতির তো কিছুটা অপ্রতুলতা রয়েছে।