সাংবাদিকদের সাথে নবাগত পুলিশ সুপারের মতবিনিময়


মাদক নির্মূল না হওয়ার কারণ চিহ্নিত করা হবে…………নবাগত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার
নবাগত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেছেন, চাঁদপুর জেলায় অনেক সম্মানিত মানুষ রয়েছেন। তার মধ্যে আমাদের পুলিশের আইজিপি মহোদয়ের বাড়িও চাঁদপুরে। সেজন্য খুবই সতর্কতার সাথে আমাদের কাজ করতে হবে। আগে যারা এসপি হিসেবে কাজ করেছেন তাদের কাজগুলো ধারণ করে আমি এগিয়ে যেতে চাই। মাদক কেন চাঁদপুর জেলায় নির্মূল হচ্ছে না, এর কারণটা প্রথমে চিহ্নিত করা হবে। চাঁদপুর জেলায় যে ক’টি সমস্যা রয়েছে একটি দু’টি করে সমাধান করার চেষ্টা করবো।
গতকাল সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাজের ধরনের মিল আছে। তবে কিছু-কিছু সংবাদ প্রকাশ হলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে মামলার রহস্য উদঘাটন করার জন্য তথ্য প্রকাশ করেন না। সেজন্য একটু অপেক্ষা এবং আমাদের সাথে ওই বিষয়ে আলাপ করে সংবাদ করা হলে ভাল হবে। আমি যে ক’দিন এই জেলায় থাকবো কথায় ও কাজে মিল থাকবে। কারণ বর্তমান সময়টাই হচ্ছে তথ্য প্রবাহের যুগ। পুলিশ কোন তথ্য না দিলে একজন সাংবাদিক অন্য উপায়ে তথ্য নিয়ে নিবেন। যার ফলে আমাদের চেষ্টা থাকবে তাকে সঠিক তথ্য দেয়া। আর তা নাহলে আমাদের ক্ষতি হবে অর্থাৎ পরদিন সংবাদে ভুল তথ্য উপস্থাপন হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, আমি জানি আমরা দেয়া একটি তথ্য কোন মিডিয়ার একটি স্ক্রল দেয়া সম্ভব। কারণ এখন মিডিয়ায় সময়ের প্রতিযোগিতা রয়েছে। একটি তথ্য ৫ মিনিট পরে হলে আর গুরুত্ব থাকে না। একটি ম্যাসেজের সাথে সময়ের গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের কথায় এবং কাজে পুরোটাই মিল থাকবে। আপনাদের আমরা কখনো বলবো না, তথ্য দিচ্ছি, পরে দিব না- এমন কখনই করবো না। কারণ তথ্য না দিলে আপনাদের আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা হবে। আমরা দ্রæত সময়ে আপনাদের তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো। যাতে করে আপনারা দ্রæত সময়ে সত্যটাকে উদঘাটন করে আমাদের কাজে সহায়তা করতে পারেন এবং সংশ্লিষ্ট কাজটি যেন সঠিকভাবে পরিচালিত হয়। আমি মনে করি চাঁদপুরের পুলিশের কাজ হবে একটি সংবাদিকবান্ধব পুলিশিং তৈরী করা।
অনুষ্ঠানে নবাগত পুলিশ সুপারের বক্তব্য শেষে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক ল²ণ চন্দ্র সূত্রধরসহ সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ পুলিশ সুপারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ সুপার বলেন, এই জেলায় কাজ করা আমার জন্য ভাগ্যের বিষয়। আপনাদের উষ্ণবরণ আমাকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। আশা করি আমরা একই টিউনিংয়ে থেকে কাজ করতে পারব।
নবাগত পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উন্মুক্ত পর্বে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটওয়ারী, সাবেক সভাপতি শাহ্ মো. মাকছুদুল আলম, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদি, জিএম শাহীন, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি আলম পলাশ। মতবিনিময় সভা পরিচালনায় ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. মিজানুর রহমান।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মো. আসাদুজ্জামান, চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন, মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুনুর রশিদসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাস সাধারণ সম্পাদক লক্ষন চন্দ্র সূত্রধর, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক জালাল চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল-ইমরান শোভন, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একে আজাদ, সাংবাদিক নেয়ামত হোসেন, ফারুক আহমেদ, শাহাদাত হোসেন শান্তসহ প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
পুলিশ সুপার সাংবদিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় নোট নিয়ে জবাবে বলেন, আমরা কোন ঘটনার পরে মাথা গরম করবো না। ঠান্ডা মাথায় কাজগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবো। এছাড়া আমাদের বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে কাজ করবো। আমি যেমন পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করবো, তেমনি এসপি ডিএসবি হিসেবেও কিন্তু আমার কর্মকান্ড রয়েছে। এটি কিন্তু আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এসপি ডিএসবির কিন্তু বিশাল কাজ রয়েছে। আমি ডিএসবিতে কাজ করে আসছে। সেখানে দেখেছি এমন কোন ব্যক্তি নেই, যার সম্পর্কে কোন প্রোফাইল তৈরী করা যায় না। সুতরাং আমরা সব কিছুই মাথায় রাখবো। অবশ্যই আমাদের সীমার মধ্যে রেখে সর্বোচ্চটুকু করবো। খুবই সাধারণ কথা হচ্ছে আমরা আচরণে ভদ্র হবো এবং সিদ্ধান্তে অবশ্যই আমরা দৃঢ় থাকবো। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রথম মেসেজ।
সাংবাদিকদের কাছে দ্রæত কোন ম্যাসেজ পাঠানোর জন্য মোবাইলে গ্রæপ টেক্স ম্যাসেজ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবো। যাতে করে যে ক’জন সাংবাদিক রয়েছেন ঘটনার মূল বিষয়টা খুব দ্রæত জানতে পারেন।
সর্বশেষে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বক্তব্যের রেস ধরে বলেন, আপনারা যে ক’জনে বক্তব্য দিয়েছেন প্রায় অনেকের বক্তব্যে মাদকের বিষয়টি উঠে এসেছে। অর্থাৎ আপনারা মাদক নিয়ে কাজ করতে চান। মাদক নিয়ে কাজ করার জন্য আমি সময় নিয়ে অর্থাৎ গভীরভাবে চিন্তা করে কাজ করতে চাই। যাতে করে আমি কাজ করতে গিয়ে ডিফল্টার নাই হই। কথা দিয়ে যাতে আপনাদের কথা রাখতে পারি। আজ আপনাদের সাথে যেভাবে বসেছি, যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে বসবো।
চাঁদপুর জেলার নাবগত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার) ১৯৭৩ সালের ২ অক্টোবর পাবনা জেলার সদর উপজেলার শালগাড়ীয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আব্দুস সাত্তার ও মা মরহুমা রাবেয়া বেগম। তিনি ২০০১ সালের ৩১ মে ২০তম বিসিএস’র মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি পাবনা ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করার পর যশোর জেলা, র‌্যাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, এসবি ও জেলাসহ পুলিশের বেশ কিছু ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। চাঁদপুর জেলায় যোগদানের আগে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর হতে ২০০৯ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত FPU Mission (Ivory Coast) দায়িত্ব পালন করেন।
পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী ফারহানা চৌধুরী বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত আছেন। তাঁর মেয়ে তাসমিতা রহমান দশম শ্রেণি ও ছেলে ফাহিম রহমান পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।