হতাশাজনক উপস্থিতিতে হাজীগঞ্জে ভোটগ্রহণ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিরুত্তাপ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে নীরবে শেষ হলো ভোটারশূন্য এবং আগ্রহহীন নির্বাচন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো হতাশাজনক।
কেউ বলছেন বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাননি, আবার কেউ বলছেন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ভোটাররা। তাই ভোটারদের তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না। সব মিলে ভোটারদের আগ্রহ ছিল খুব কম। তবে শেষ পর্যন্ত উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ভোটারহীন ভোটগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি ছবি তোলার মতো ভোটারদের কোনো লাইনও ছিলো না। সকাল থেকেই একজন দু’জন করে ভোটার এসে ভোট দিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও প্রার্থীর অনুসারীরা ডেকে ডেকে ভোটারদের কেন্দ্রে এনেছেন। আবার যারা ভোট দিতে গিয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই ভোটার নম্বর খুঁজে পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
এর মধ্যে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো হতাশাজনক। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাই স্কুল এন্ড কলেজের নারী কেন্দ্রের ঘুরে দেখা যায়, ৯টি বুথের মধ্যে ১ ভোট পড়েছে। আবার হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে নারী কেন্দ্রে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ৮টি বুথের মধ্যে ভোট পড়েছে ৫টি। একই কলেজে পুরুষ ভোট কেন্দ্রে একই সময়ে ভোট পড়েছে ৯৭টি।
বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল মাদ্রাসায় পুরুষ ভোট কেন্দ্রে দুপুর ১টা ২০ মিনিটি পর্যন্ত ৫টি বুথের মধ্যে ২২৫টি ভোট পড়ে। একই ক্যাম্পাসে এবং একই সময়ে বেলচোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ৫টি বুথে ভোট পড়েছে ১শ’টি। এরকম চিত্র পুরো উপজেলায়। তবে অধিকাংশ কেন্দ্রের চেয়ে দু’একটি কেন্দ্রে ব্যতিক্রম ভোট পড়তে দেখা গেছে।
একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন মিলে হাজীগঞ্জ উপজেলা গঠিত। উপজেলার ৮৩টি ভোট কেন্দ্রের ৫৭৫টি বুথের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। মোট ভোটার ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬শ’ ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৬শ’ ৮৯ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ২ জন।
নির্বাচনে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণ করলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলেন ৩ জন। তারা হলেন- পদ্মফুল প্রতীকের প্রার্থী মির্জা শিউলী পারবিন মিলি, ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী শিউলি আক্তার ও প্রজাপতী প্রতীকের প্রার্থী ডা. মুক্তা। এর আগে কলস প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারবিন ইসলাম এবং বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকের প্রার্থী খাদিজা বকাউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরাসরি কাউকে সমর্থন না দিলেও উপজেলা ও পৌর যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ দলীয়ভাবে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী শিউলী আক্তারের পক্ষে কাজ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে পদ্মফুল প্রতীকের প্রার্থী মির্জা শিউলী পারবিন মিলির পক্ষে কাজ করেছেন।
এ ব্যাপরে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করায় শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম জানান, উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কম ভোট পড়লেও কোনো অনিয়মের সাথে আমরা আপোষ করিনি।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে গাজী মাইনুদ্দিন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে গোলাম ফারুক মুরাদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গাজী মাইনুদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গোলাম ফারুক মুরাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।