হাজীগঞ্জে স্কুল ছাত্রকে জবাই করে হত্যা, আটক-৫


মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে মারুফ হোসেন রিয়াদ (১৫) নামের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার সকালে পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ডের আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ফরিদের টং দোকান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার মারুপ হোসেন রিয়াদ ওই ওয়ার্ডের মকিমাবাদ গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে। সে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির (ভোকেশনাল শাখা) শিক্ষার্থী। সে তার বাবা-মায়ের সাথে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া গ্রামে নতুন বাড়িতে থাকতো।
এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে যে দোকানে রিয়াদের মরদেহ পাওয়া গেছে ওই দোকানের কর্মচারী ফারুক হোসেন (২৮) পলাতক রয়েছে। সে পার্শ¦বর্তী কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং দোকানের মালিক সিঙ্গারা বিক্রেতা ফরিদের ভায়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকালে আমিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের ফরিদের সিঙ্গারা দোকানে তালাবদ্ধ অবস্থায় রিয়াদের মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে থানায় খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থল এসে মরদেহ উদ্ধারপূর্বক ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট আলামত সংগ্রহ করে। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও পিআইবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করে নেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান ও হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র আ.স.ম. মাহবুব-উল আলম লিপন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুর রশিদসহ গোয়োন্দা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহত রিয়াদের মা রোজিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের সাথে দোকানের মালিক ফরিদের ভায়রা ফারুকের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তারা এক সাথে চলাফেলা করতো। ফারুকের সাথে একটি মোবাইল বা মোবাইল নম্বর নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কথা জানতে পারি।
তিনি বলেন, এছাড়া রিয়াদের চাচা শাকিল (১৮) সে আমার বোনকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাতে আমরা রাজি হইনি। এ নিয়ে শাকিলের সাথে আমার ছেলে দ্ব্নদ্ব সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই মাস আগে একটি ব্যাচলাইটকে কেন্দ্র করে রিয়াদকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে শাকিল। তখন হাসপাতালে নিয়ে সেলাই দেয়া হয়। থানাও একটি অভিযোগ দিয়েছি।
একই কথা জানান রিয়াদের বাবা ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, আমার চাচাতো ভাই শাকিলের সাথে রিয়াদের দ্বন্দ্ব ছিল। কিছুদিন আগে সে (শাকিল) তার পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। এ ঘটনায় থানায় সালিস-দরবার পর্যন্ত হয়েছে। এরপর থেকেই শাকিল আমার ছেলেকে হুমকি-ধমকি দিত।
তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে কে বা কারা আমার নতুন বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো। আমার সাথে কিসের শত্রুতা তাদের। আমার ছেলেকেও খুন করলো। সকাল থেকে শাকিল ও ফারুক পলাতক রয়েছে বলে তিনি জানান।
দোকানের মালিক ফরিদের স্ত্রী শাহিদা বেগম বলেন, ফারুকের সাথে রিয়াদের বন্ধুত্ব ছিল। গত কয়েকদিন তাদের সম্পর্ক একটু খারাপ দেখেছি। দোকানটি ফারুক পরিচালনা করতো এবং প্রতিদিন বিকালেই দোকানটি বন্ধ করা বলে তিনি জানান।
স্থানীয় কাউন্সিলর জাহিদুল আজহার আলম বেপারী বলেন, সকালে ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি এ দোকানে একটি ছেলেকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। এখানে এসে জানতে পারি দোকানের মালিক ফরিদ। তার দোকানের কর্মচারী ফারুককে ঘুম থেকে জাগাতে এসে দেখে বন্ধ। পরে সার্টার ভেঙ্গে দেখে রিয়াদের লাশ। বিষয়টি জেনে আমি পুলিশ অবহিত করেছি।
হাজীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য রিয়াদের মরদেহ চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। হত্যার ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।