সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ আজ দেশে আসছে

স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ আজ ঢাকায় আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১২টা) জেএফকে বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে খোকার মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে সাদের হোসেন খোকার মরদেহ ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবে।
বাংলাদেশ সময় সোমবার বেলা ১টা ৫০ মিনিটে (নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় রাত ২টা ৫০ মিনিটে) নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্কোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ কবেন। একই সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও পবিত্র কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাদেক হোসেন খোকার লাশ গ্রহণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
এরপর বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় খোকার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে খোকার মরদেহ সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। বাদ জোহর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের সামনে জানাজা হবে।
দুপুর ৩টায় জানাজা হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবনে। এরপর বাদ আসর গোপীবাগ নিজ বাসা হয়ে ধুপখোলা মাঠে জানাজা শেষে জুরাইন গোরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হবে।
এদিকে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় নিউইয়র্কের জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার মসজিদে অনুষ্ঠিত জানাজায় ইমামতি করেন মাও. আবু জাফর বেগ।
জানাজায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন নিউইয়র্কের কনস্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন। জানাজায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ দূতাবাসের কর্মকর্তা ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সর্বস্তরের হাজারও প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধারা খোকাকে গার্ড অব অনার দেন।
খোকার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে ঢাকায় গোপীবাগের ৩/১ দ্বিতীয় লেনের বাড়ি ‘শেকড়’ এ দেখা গেছে অসংখ্য মানুষের ভিড়। সাদেক হোসেন খোকারা দুই ভাই ও ছয় বোন। এর মধ্যে ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ও এক বোন দেশে থাকেন। বাকি বোনেরা নিউইয়র্কে থাকেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা খোকার শেষ ইচ্ছা যে দেশের মাটির জন্য যুদ্ধ করেছেন, সেখানে যেন তাকে কবর দেয়া হয়। খোকার লাশ এলে দাফন করা হবে জুরাইনে, মা-বাবার কবরের পাশে।
গোপীবাগের বাসায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বাড়ির নিচতলায় সাদেক হোসেন খোকার জন্য শোকবই খোলা হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে খোকার বাসভবনে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী আরো অনেকে।
এ সময় শোকবইয়ে বিএনপি মহাসচিব লেখেন, এই অমর সাহসী গণতান্ত্রিক নেতা সমাজ পরিবর্তনের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে চিরকাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। রক্ত ঝরিয়েছেন। দেশনেত্রীর মুক্তির সংগ্রামে সাহস জুগিয়েছেন। আজীবন সংগ্রামী এই নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
এর আগে বাসভবনে যান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীম। তারাও শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।