২ লাখ টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা কচুয়ায় সিজার অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার
কচুয়া বিশ্বরোডস্থ কেয়ার ডিজিটাল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় ফাতেমা আক্তার (৩৬) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত রোববার সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের বিচার দাবি জানিয়ে ফাতেমার স্বজনরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। মৃত ফাতেমা উপজেলার কচুয়া দক্ষিণ ইউনিয়নের বাকৈয়া গ্রামের প্রধানিয়া বাড়ির আবুল হাসানাতের স্ত্রী। গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকাস্থ যাত্রাবাড়ী আল-করিম জেনারেল হসপিটালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাতেমার মৃত্যু হয়।
গতকাল সোমবার সরজমিনে গেলে মৃতের স্বামী হাসানাত জানান, রোববার রাতে ফাতেমাকে কচুয়া কেয়ার ডিজিটাল হাসপাতালে আনা হলে হাসপাতালের মালিক কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের সিনিয়র নার্স বাসুন্তী রানী ফাতেমাকে সিজার করতে হবে এ কথা আমাকে জানান। সিজারের জন্য আমার স্ত্রীকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলে বাসুন্তী রানী বলেন, সিজার আমাদের হাসপাতালে হয়। অন্য হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন নেই। আমি তার কথায় সিজার বাবদ ১২ হাজার টাকার চুক্তি করি। সিজারে বাচ্চা হওয়ার পরপরই রোগীর রক্ত বন্ধ না হওয়ায় এবং রোগীর বেহাল দশার কারণে তাৎক্ষণিক তাকে কুমিল্ল¬া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেও ফাতেমার অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত ডাক্তাররা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ রোগীকে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে প্রথমে প্রসবের রক্ত বন্ধ করেন, পরে ১১ ব্যাগ রক্ত দেয়ার মাধ্যমে ফাতেমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন এবং রোগীকে আইসিইউতে রাখার জন্য বলেন। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে সিট খালি না থাকায় ফাতেমার স্বামী হাসানাত ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে সায়েদাবাদ আল করিম জেনারেল হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি করেন। অবশেষে ৮ ডিসেম্বর বিকেল ওই হসপিটালে ফাতেমা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের মালিক বাসুন্তী রানীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এ রোগীর ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে অপারেশন করেছেন কচুয়া স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হামিমা ও ডা. সোহেল রানা।
ডা. হামিমা আক্তারকে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে খুঁজে না পেয়ে তার মোবাইলে (০১৭২৬৯৬৯৪০২) ফোন করলে প্রথমে কল দিলে রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন। পরে বার-বার কল দিয়েও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। ডা. সোহেল রানা জানান, সিজারের সময় আমি ফাতেমাকে অজ্ঞান করার ডাক্তার ছিলাম। হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে জানা যায়, ডা. সোহেল রানা যে সময় ফাতেমাকে চিকিৎসা করতে হাসপাতালে যান তখন তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন। ডিউটিরত অবস্থায় আপনি কেয়ার ডিজিটাল হাসপাতালে আসলেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে এ প্রতিবেদককে জানান, আমি ৩ ঘণ্টার জন্য ডা. হামিমা আক্তারকে জরুরি বিভাগে দায়িত্ব দেই।
এদিকে এই মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য কেয়ার ডিজিটাল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ফাতেমার স্বামী হাসানাত ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে ২ লাখ টাকার চুক্তি করেন। এ অর্থের বিষয়ে স্বীকার করে ফাতেমার স্বামী হাসানাত জানান, ২ লাখ টাকা দিবে বলে আমি শুনেছি এবং দাফনের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নগদ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, ফাতেমার অকাল মৃত্যুতে মাহারা হয় ১৪ বছরের মেয়ে সানজিদা, ৬ বছরের ছেলে হাসিব ও নবজাতক সন্তান।