খালেদা জিয়া ৬ মাসের জন্য মুক্ত!


স্টাফ রিপোর্টার
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাঁকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল মঙ্গলবার তার বাসায় সংবাদ ব্রিফিং করে এ তথ্য জানান। ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, খালেদা জিয়ার সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাঁকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত সুপারিশ করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। অন্য হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে পারবেন না।
মন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, আইনি প্রক্রিয়ায় এই দুই শর্তসাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে, তখন থেকে এই ৬ মাস গণনা শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বিদেশে পাঠানো মানে তাঁকে ‘সুইসাইডের’ মুখে ফেলা।
এই ৬ মাস পরে কী হবে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আগে তো ৬ মাস যাক, তার পরে দেখা যাবে।
এদিকে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে খুশি দলের শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করছেন, এটা পুরো জাতির জন্য একটি স্বস্তির সংবাদ। তবে এ মুক্তি অনেক দেরিতে হলো। আর ছয় মাস বাড়িতে থাকা ও বিদেশ যেতে না পারার যে শর্তারোপ করা হয়েছে, তাতে আপত্তি নেতাদের।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, যদি প্রয়োজন হয়, তবে খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দেয়া উচিত। এটা তার অধিকার। কোনো কোনো নেতা বলেছেন, বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রিত না হলে আরো আগেই মুক্তি পেতেন খালেদা জিয়া। সরকারের সব কাজে ঢিলেমির অভিযোগও করেছেন কোনো কোনো নেতা।
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেন, শর্তসাপেক্ষে মুক্তি কতটা কাজে দেবে, তা দেখতে হবে। এছাড়া দলের সিদ্ধান্ত আলোচনা করে জানাতে হবে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিএনপি মহাসচিব সরকারের প্রতি জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি এ ঐক্য সৃষ্টিতে কোনো কাজে দেবে কি না, প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো কাজে দেবে না। আগেও জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে, তারা সাড়া দেয়নি। এখন শর্তসাপেক্ষে মুক্তি কতটুকু কাজে দেবে, তা দেখতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মামলা দায়ের হয়। দশ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার রায়ে তার ৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। তবে পরে হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তার মধ্যে গত ১১ মাস ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩০টির বেশি মামলা রয়েছে।