চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটিতে বড় ছেলের নামে সম্পত্তি লিখে দেওয়ায় বৃদ্ধ আব্দুল মালেক তালুকদারের লাশ দাফনে বাঁধা দেন অন্য সন্তানরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে ইউনিয়নের সেনগাঁও তালুকদার বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। পরে পুলিশ আসার পর স্থানীয় গণ্যমান্যদের মধ্যস্ততায় ২০ ঘণ্টা পর লাশ দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুল গনি তালুকদারের ছেলে আব্দুল মালেক তালুকদার তার ২ একর সম্পত্তির মধ্যে বড় ছেলে ওসমান তালুকদারের নামে প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পত্তি লিখে দেন। এ নিয়ে তার অন্য ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই পিতাকে দাফন করতে অন্য সন্তানরা বাঁধা প্রদান করেন।
গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আব্দুল গনি তালুকদার স্ট্রোক করলে হাসপাতালে নেয়ার পথে সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু পর ছোট দুই ছেলে আব্দুস সোবহান ও মনির তালুকদারসহ তিন বোনেরা বাবার লাশ দাফনে বাঁধা দেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে আশপাশের মানুষজন ঐ বাড়িতে ভিড় জমায়। এক পর্যায়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এমএ ইউসুফ মিন্টু মিজি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং বাদ জোহর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এই বাড়ির বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য কামাল আহমেদ তালুকদার বলেন, লাশ দাফন না করার বিষয়টি আমি শুনে তার বড় ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী ওসমান তালুকদারের সাথে কথা বলি। তিনি আমাকে মোবাইলে জানান, আমার নামে যে সম্পত্তি লিখে দেয়া হয়েছে ওখান থেকে ৫ শতাংশ ছাড়া বাকী সম্পত্তি আমি ফিরিয়ে দিবো। তবে লাশ দাফনে আপাতত কোন বাঁধা নেই। চারদিকে মাইকিং চলছে বাদ জোহর লাশ দাফন করা হবে।
এদিকে ওসমান তালুকদারের এক ভগ্নিপতি বলেন, আমি তাদের অনেকবার বলেছি বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য। গত প্রায় ২ মাস আগে আমার শাশুড়ি মারা যাওয়ার পরেও বলেছিলাম। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি।
মৃত আব্দুল মালেক তালুকদারের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে বলেন, আমার বাবা আমাদের বড় ভাইয়ের নামে এককভাবে ৯০ শতাংশ সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। জীবিত থাকা অবস্থায় আমাদের বাবা ও আমার বড় ভাইকে অনেকবার বলার পরেও তারা জবাবে বলেন, বাবা মারা যাবার পরে এ বিষয়ে যা করার করবে। আমাদের বাবাকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে আমার ভাই এমনটা করেছে।
তারা আরো বলেন, আমাদের বাবাকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে চাঁদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে ভুল বুঝিয়ে ৯০ শতক জমি আমাদের বড় ভাই তার নামে লিখে নেন। বাবা জীবিত থাকতে অনেকবার তাকে বললেও তিনি কর্ণপাত না করে গোপনে ৩দিন আগে বিদেশে চলে যান। গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আমার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বাবার সম্পত্তি সব ভাই-বোনদের সমানহারে বন্টন করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। আমরা সবার সিদ্ধান্তে বাদ জোহর জানাযা শেষে বাবার লাশ দাফন করি।
প্রবাসী ওসমান তালুকদারের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, আমার শ^শুর গত ২০ বছর যাবত আমাদের এখানেই থেকেছেন। তাঁর দেখাশোনা ও চিকিৎসা খরচ আমরাই একা বহন করেছি। ওনার কোন ছেলে মেয়ে কোনদিন খোঁজ-খবর নেয়নি। আমার শ^শুর অন্য ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে সেবাযত্ন ও খোঁজ-খবর না পেয়ে আমার স্বামীকে স্বেচ্ছায় এই সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান। এমনকি বুধবার সন্ধ্যায় তিনি স্ট্রোক করলে আমি সাথে সাথে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, আমার শ^শুরের দুই ছেলের পেছনে বিদেশ পাঠানোসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর পরেও তারা এমনটা করে যাচ্ছেন। আমার স্বামী গত ৫-৬ দিন হলো সৌদি আরব গিয়েছে। ওখানে গিয়েও একটি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে তাকে। ৩ সন্তান নিয়ে অসহায়ের মত পড়ে আছি। এরমধ্যে আমার দেবররা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন। আমি নাকি সম্পত্তি লিখে নেয়ার ব্যাপারে সবকিছু জানি। আমার স্বামীর অবর্তমানে আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছেন। এজন্য আমি প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার এএসআই প্রাণকৃষ্ণ বলেন, ‘৯৯৯’ নম্বরে কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। তাদের পারিবারিক সম্পত্তিগত সমস্যায় বাবার লাশ দাফন করতে দেয়া হচ্ছেনা বলে জেনেছি। আমরা ঘটনাস্থলে এসে তাদের এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসে সমস্যাটি মিমাংসা করে নিতে বলি। অবশেষে আব্দুল মালেক তালুকদারের মৃত্যুর ২০ ঘন্টা পর তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাও হতে দেখা যায়।
৩০ নভেম্বর, ২০২৪।