সাহেদ হোসেন দিপু
হাইমচরে ফসলি জমিতে স্টেডিয়ামের প্রস্তাবনা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম হলে জীবন-জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে পথে বসতে হবে তাদের। তাই ফসলি জমি নষ্ট না করে উপজেলার অন্য কোন স্থানে স্টেডিয়াম করার জোর দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
জানা যায়, স্টেডিয়ামের জন্য উপজেলার আলগী দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত উত্তর আলগী মৌজায় প্রায় সাড়ে ৩.১৯০০ একর ভূমি প্রস্তাব করা হয়। স্টেডিয়াম নির্মিত হলে পাশের জমিসহ প্রায় ৫ একর কৃষি জমি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ফলে ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম হলে নিঃস্ব হবে হাইমচরের অসংখ্য কৃষক। ফসলি জমিতে স্টেডিয়াম চায় না এই এলাকার কৃষক ও সাধারণ মানুষ। প্রস্তাবিত কৃষি জমিতে কৃষকরা বছরে ৩ বার ফসল চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়া ধান, গম, ভুট্টা, পানের বরজ, পাট ও সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করেন। এ ভূমি থেকেই গবাদি পশুর জন্য খড় ও ঘাসের ব্যবস্থা করেন তারা।
উপজেলার অধিকাংশ জমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে এবং উত্তর আলগী ইউনিয়ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় মানুষের জীবনযাপনের উপর ব্যাপক প্রতিকূল প্রভাব পড়বে। এছাড়া এখানে স্টেডিয়াম নির্মাণ হলে আশেপাশের কৃষি জমি বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশংকা করছে স্থানীয়রা।
কৃষক মিজান জানান, স্টেডিয়ামের জন্য প্রস্তাবিত জমিতে তার নিজের ৪৬ শতাংশ জমি থেকে প্রতি বছর ৪০ মণ ধান ঘরে তুলেন তিনি। ধান, ভুট্টা, সয়াবিন, কলই, সিজনালিন চাষাবাদ করেন তিনি। এ কৃষি জমির আয়ের উপর তার ৭ সদস্যের পরিবার নির্ভরশীল। এ সম্পদের উপর স্টেডিয়াম হলে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসবেন। তাই তিনি এ কৃষি ফসলি জমি নষ্ট করে স্টেডিয়াম হোক- তা চান না।
কৃষক কালু হোসেন জানান, হঠাৎ করে সরকারি লোকজন এসে বলেন আমাদের কৃষি জমিতে শেখ রাসেল নামক স্টেডিয়াম হবে। এ কথা শুনে আমরা আকাশ থেকে পড়ি। এখানে স্টেডিয়াম হলে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবো। আমাদের প্রতি বছরের চাল-ডাল এ জমি থেকে উৎপাদন হয়। আমাদের কোন চাল কিনা লাগতো না। এখানে স্টেডিয়াম হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। আমরা এখানে কোনভাবেই স্টেডিয়াম চাই না। আমার ৪০ শতাংশ জমির আয়-ব্যয় দিয়ে ৮ সদস্যের পরিবার নির্ভরশীল। জমিতে চাষ করতে না পারলে ছেলে সন্তান নিয়ে আমরা কোথায় যাব? কি খাব? এ ভেবে এখনই পাগল হওয়ার মত। আমাদের জীবনমান রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকিল খন্দকার বলেন, হাইমচরে ফসলী জমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত জমিন ফসলী জমি কিনা তা তদন্ত করার জন্য আমাকে চিঠি দেয়া হয় না। চিঠি পেলেই আমি তদন্ত কাজ শুরু করবো।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ঐ জমি ফসলি জমি ঠিক আছে, তবে ৩ ফসলি জমি না। এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় কৃষকদের সাথে বসে আলোচনা করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা বলেন, কৃষকদের জীবন জীবিকার ক্ষতি করে কোন কাজ আমরা করবো না। স্টেডিয়ামের জন্য প্রস্তাবিত জায়গা কৃষি ফসলি জমি কিনা তা যাচাই করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি রিপোর্ট দিলে আমরা তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবো।
১০ জুন, ২০২৪।