মরছে মানুষ, হচ্ছে পঙ্গু, নিঃস্ব পরিবার; তাদের রুখবে কে..?
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সদরসহ উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে সিএনজিচালিত স্কুটারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গতি আর চালকদের ভয়ংকর প্রতিযোগিতার ফলে প্রতিনিয়ত মরছে মানুষ, হচ্ছে পঙ্গু, নিঃস্ব পরিবার। তাদের রুখবে কে?
এমন প্রশ্ন যাত্রী সাধারণসহ সচেতনমহলের। স্থানীয়দের দাবি, সড়কে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল, এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ গাড়ি লাইসেন্সবিহীন, চালকদের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স না থাকার কারণে বাড়ছে এসব দুর্ঘটনা। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা সদরে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ, এসব সিএনজিচালিত স্কুটার।
দেখা গেছে, জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলায় সিএনজিচালিত স্কুটারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে, উপজেলা সদরগুলোতে এখন বাসের পরিবর্তে সিএনজিচালিত স্কুটারই প্রধান পরিবহনব্যবস্থা। অর্থাৎ কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক ও দূরপাল্লার (কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রাম) পথ ছাড়া কোন বাস নেই।
এতে করে মানুষ বাধ্য হয়েই সিএনজিচালিত স্কুটারে চলাচল করছে। যাত্রীর পাশাপাশি মালামাল পরিবহন এবং রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে সিএনজিচালিত স্কুটার। আবার খুব সহজেই এবং হাতের নাগালেই সিএনজি পাওয়া যায়। এ কারণে সিএনজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এর সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
অপরদিকে জেলা ও উপজেলা সদর এবং বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব সিএনজিচালিত স্কুটারগুলো বাজারের যেখানে-সেখানে পার্কিং ও যাত্রী উঠা-নামা করাচ্ছে। এতে বাজারগুলো যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
যাত্রী, পথচারী ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে তারা জানান, চালকদের বেপরোয়া ড্রাইভিং ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে মানুষ অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এতে শুধু যাত্রীরাই প্রাণ হারায় বা পঙ্গুত্ব বরণ করে না, পথচারী ও সিএনজির চালকরাও এর শিকার হচ্ছেন। তারপরও অন্য চালকদের মাঝে সচেতনতার বালাই নেই।
একাধিক যাত্রীর সাথে কথা হলে তারা জানায়, সিএনজিগুলো বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে চালকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না বা কারো ধার ধারে না। তারা অভিযোগ করে বলেন, অধিকাংশ গাড়ি (সিএনজি) ও চালকের লাইসেন্স নেই। আবার চালকদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক চালক কিশোর ও তরুণ। যার কারণে সিএনজিচালিত স্কুটারগুলো বেশি পরিমাণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মো. শাহজাহান মিয়াজী নামের ওয়ারুকগামী (শাহরাস্তি) একজন যাত্রী বলেন, সিএনজিতে ওঠলেই ভয় লাগে। কারণ, সিএনজিতে উঠলেই মনে হয় যেন বিমানে চড়ছি। ওই পথে (হাজীগঞ্জ থেকে ওয়ারুক) কোন যাত্রীবাহী বাস না থাকায়, বাধ্য হয়েই সিএনজিতে চলাচল করতে হয় বলে তিনি জানান।
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, গাড়ি চালানোর সময় তাদের (চালক) হুঁশ থাকে না। উল্টা-পাল্টা গাড়ি চালায়। ড্রাইভারদের ডাক দিলে (তাদের কিছু বললে) তারা কথা শুনেন না। গাদ্দারি করে নিজের মতো করে গাড়ি চালায়। আবার অনেক ড্রাইভার যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
মো. মাসুদ খান ও লিটন ভূঁইয়া নামের দুইজন চালকের সাথে কথা হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমাদের মধ্যে অনেক ড্রাইভার আছে যারা উল্টা-পাল্টা (বেপরোয়া) গতিতে গাড়ি চালায়। এসময় তারা চালকদের পাশপাশি যাত্রীদেরও দোষারোপ করে বলেন- অনেক যাত্রী আছে তারা গাড়িতে উঠে ড্রাইভারদের খুব তাড়া দেন। যার ফলে জোরে গাড়ি চালাতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চালক জানান, রোডে (সড়ক) যাত্রীর তুলনায় গাড়ি (সিএনজিচালিত স্কুটার) অনেক বেশি। যার ফলে গাড়ি ভাড়া ও তাদের বেতন উঠাতেই হিমশিম খেতে হয়। তাই অনেক ড্রাইভার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। অর্থাৎ জোরে গাড়ি চালায়।
এসব বিষয়ে সচেতনমহল জানান, গাড়ি ও চালকদের লাইসেন্স নিশ্চিতকরণ, চালকদের প্রশিক্ষণ, নির্দিষ্ট গতিসীমা, যত্রযত্র পার্কিং ও যাত্রী উঠা-নামার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তড়িৎ ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালকদের সতর্ক করে দেওয়া দরকার। এতে সমস্যার অনেকটা সমাধান হতে পারে বলেও মন্তব্য তাদের।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) মো. বুরহান উদ্দিন বলেন, চালকসহ জনসচেতনতায় আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত চালক ও পরিবহনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে সতর্ক করা হচ্ছে এবং এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।
০৯ জুন, ২০২৪।