
মনিরুল ইসলাম মনির
২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত ১২টা ১মিনিট (৩০ অক্টোবর) থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে নদীতে নামবে জেলেরা। মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে আজ। দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটানোর পর আজ থেকে নদীতে মাছ ধরতে নদীতে নামবে প্রায় ৫১ হাজার ১শ’ ৯০ জন জেলে। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য সরকার গত ২২ দিন চাঁদপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের ৫টি স্থানকে ইলিশের অভায়াশ্রম কেন্দ্র ঘোষণা করে সরকার। এ সময় নদীতে যে কোন ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিলো। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে জেলেরা এখন প্রস্তুত।
জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত যার ৭০ কিলোমিটার পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়।
আর এ কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও উত্তর উপজেলার ৪১ হাজার ১শ’ ৮৯জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে। নিষেধাজ্ঞা শেষে বাঁধাহীন নদীতে মাছ ধরতে পারবে তাই জেলেদের মনে কর্মদ্দীপনা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে তারা সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল, দশানী, মোহনপুর, এখলাছপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, জেলেদের নৌকা মেরামত কাজ শেষ করে নদীতে নৌকা নামিয়েছে।
বুধবার মধ্য রাত থেকে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকৃত জেলেদের ধারণা খুব একটা ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে মনে হয় না। তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, চাঁদপুরে কিছু জেলে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও রাতের অন্ধকারে মেঘনার চরাঞ্চলে মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছিল দেদারছে। সেখানে টাস্কফোর্স পৌঁছা সম্ভব নয়।
মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় জেলে পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় জেলেরা এখন তাদের নৌকা ও জাল প্রস্তুত করেছে। ইলিশ ধরার জন্য নৌকা ও চান্দি জাল নিয়ে প্রস্তুত ওই জেলে পাড়ার হীরামন বর্মন।
তিনি জানান, গত ১০দিন পূর্বে পদ্মা-মেঘনার পানি ছিলো পরিস্কার। কিন্তু এখন গোলা। এ কারণে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আমরা ভোলা জেলার দৌলতখাঁ এলাকায় বেশির ভাগ সময়ে ইলিশ ধরতে যাই।
যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ছিলো প্রশাসন। অন্যান্য বছর আটককৃতরা অধিকাংশই ছিল অন্য জেলার। এ বছর আটককৃতদের বেশির ভাগই চাঁদপুর জেলার।
আগামী বছর ইলিশ উৎপাদনের উপর নির্ভর করবে কর্মসূচির সফলতা। যদিও এ কর্মসূচি সফল করায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করেন মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন। তিনি আরো জানান, নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির নীচের সাইজের ইলিশ ধরা নিষেধ।
প্রবীণ জেলে হারাধন বর্মন জানান, পদ্মা-মেঘনা নদীতে অনেক চর জেগেছে। নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরেও ২২ দিন বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামবে জেলেরা।
সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দিলেও জেলেরা এ বছর প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ নিধন করেছে। অনেক স্থানে টাস্কফোর্সের সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যার ফলে এ বছর মা ইলিশ নিধনের কারনে ইলিশের আকাল দেখা দিতে পারে।
২২ দিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড, টাস্কফোর্স এবং মৎস্য বিভাগ ইলিশ সংরক্ষণে এবং মা ইলিশ রক্ষায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে, আটক জেলেদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। কারেন্টজাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে মা ইলিশ আটক করে গরিব-দুঃস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।