আজ ভিক্ষুকমুক্ত হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলা

৩ শতাধিক ভিক্ষুককে পুর্নবাসন

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
আজ ভিক্ষুকমুক্ত হচ্ছে হাজীগঞ্জ উপজেলা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হাজীগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজীগঞ্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান। এ দিন হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৩৭ জন ভিক্ষুককে তাদের নিজ-নিজ চাহিদা অনুযায়ী পুর্নবাসনের উপকরণ প্রদান করার মধ্য দিয়ে এ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হবে।
এর আগে প্রথম পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় প্রায় ১০০ ভিক্ষুককে উপকরণ, ভাতা ও ঘর নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এরপর ২য় পর্যায়ে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ২০০ ভিক্ষুককে পুর্নবাসনের উপকরণ দেয়া হয়। গত ১৩ অক্টোবর রাজারগাঁও ইউনিয়নে ২৮জন ও বাকিলা ইউনিয়নের ১৩জন ভিক্ষুকের হাতে পুর্নবাসনের উপকরণ তুলে দিয়ে উপজেলায় পুনর্বাসনের মাধ্যমে ভিক্ষুক মুক্তকরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম।
এরপর গত ১৭ অক্টোবর কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৫ জন, ২২ অক্টোবর কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নে ১০ জন, ২৩ অক্টোবর গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে ৯ জন, ২৪ অক্টোবর হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়ন ১৪ জন ও সদর ইউনিয়নে ২৫ জন, ২৯ অক্টোবর হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নে ১০ জন ও দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নে ১৩ জন, ৩০ অক্টোবর বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নে ৪ জন, বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নে ৮ জন ও গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ১১ জনকে পুর্নবাসনের উপকরণ প্রদান করে ইউনিয়নগুলোকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া।
তারই ধারাবাহিকতায় আজ হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৩৭জন ভিক্ষুককে তাদের পুর্নবাসনের উপকরণ প্রদান করে হাজীগঞ্জ উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলাকে ভিক্ষুক মুক্তকরণে তৎকালীন জেলা প্রশাসক (বর্তমানে যুগ্ম সচিব) আব্দুস সবুর মন্ডল উদ্যোগ নেন এবং জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতনের সংগ্রহকৃত টাকা দিয়ে তহবিল গঠন করেন। সেই তহবিল থেকে জেলার মধ্যে প্রথম হাজীগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুক মুক্তকরণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।
এর আগে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে পুনর্বাসন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ইউনিয়নগুলোতে জরিপ করা হয়। জরিপে যেসব ভিক্ষুকের নাম আসে, সেসব ভিক্ষুকদের চাহিদাসহ বিভিন্ন বিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যাচাই-বাছাই করা হয়। ওই কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন স্ব-স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। পরে ভিক্ষুকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়।
পরবর্তীতে তাদের (ভিক্ষুক) সাথে কথা বলে, যে যেই কাজে দক্ষ, তাকে সে হিসেবে পুনর্বাসনের রূপরেখা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কিছু ভিক্ষুককে ঘর নির্মাণ, ওজন মেশিন, টিন, বিভিন্ন প্রকার ভাতা প্রদান করে পুনর্বাসন করা হয়। এছাড়া ২য় পর্যায়ে ভিক্ষুকদের রিকশা ও ভ্যান গাড়ি চালানো, সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জি কাজ করা, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় এবং ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিক্ষুকদের উপকরণ প্রদান করা হয়।
এখন যারা পুর্নবাসিত হচ্ছে তাদের অনেকেই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ড এবং ১০ টাকা কেজি ধরে চালসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন। যারা বাকি আছেন পর্যায়ক্রমে তাদেরও চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া জানান, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, সব ইউপি চৈয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আমরা ভিক্ষুক চিহ্নিত করেছি। পরবর্তীতে তাদের সাথে বৈঠক করে চাহিদা সম্পর্কে জেনেছি এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, যারা পুনর্বাসিত হচ্ছে তারা যদি আত্মসম্মানবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সদিচ্ছাকে মনের মাঝে জাগ্রত করে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে সংসার চালায়, তাহলেই আমাদের এ উদ্যোগ সার্থক হবে। এরপরও যদি কোন অতিদরিদ্র মানুষ ভিক্ষার থলি নিয়ে বের হবার আগেই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে, তার সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সমাধানের চেষ্টা করা। আমাদের সমাজে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব রয়েছে একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ার।
পুর্নবাসিতদের মনিটরিং করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, যারা পুনর্বাসিত হচ্ছে তাদের কর্মকান্ড নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। আশা করি, আমরা সবাই একটু যদি সচেতন হই এবং নিজের অবস্থান থেকে চোখ-কান খোলা রেখে সমস্যা চিহ্নিত করার দায়িত্ব নেই, তাহলে সমাজ ভিক্ষাবৃত্তিসহ অনেক সামাজিক ব্যাধী থেকে মুক্তি পাবে।