নিয়ন মতিয়ুল
জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্ব যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার হার যতটা বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে মূর্খতা, অন্ধবিশ্বাস, হিংস্রতা। বিশেষ করে সিংহভাগ রাজনৈতিক নেতার মধ্যে এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর। যাদের হাতে পৃথিবী শাসনের ভার তুলে দিয়েছি আমরা। অথচ তারাই পৃথিবীকে শেষ করে দেয়ার জন্য মানবরূপে দানব হয়ে উঠছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বা জইর বলসোনারোরা যখন ক্ষমতার ছড়ি ঘোরান তখন সাধারণ জনগণ ভেড়ার পালের মতো ঘাসে মুখ দিয়ে চলে। আর এসব অনুগত ভেড়ার পালের ভোটে বার বারই ক্ষমতায় আসেন মানবতার শত্রু হিংস্র ট্রাম্প-বলসোনারোরাই। যাদের দেবতা বা মানবতার দেবদূত হিসেবে তুলে ধরতে ভাড়া করা হয় ছদ্মবেশী বুদ্ধিজীবী-দার্শনিকদেরও। যারা আমাদের চিরন্তন বিশ্বাস আর মানবতাকে রক্তের দামে বিক্রি করে দেয় প্রতিদিন।
তবে ভেড়ার পালের বাইরেও যে প্রতিবাদী কিছু মানুষ থাকে, যারা বিশ্বকে দানবের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা করতে চায়- সে বিষয়টি আমরা মাঝে মাঝে ভুলেই যাই। অস্ট্রিয়ার পরিবেশগত ন্যায়বিচার প্রচারক সংগঠন ‘অলরাইজ’ আমাদের সেই ভুল ভেঙে দিয়েছে।
পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন বন ধ্বংসে ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে অলরাইজ। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনে হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলাটি করেছে তারা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের এই নেতা ব্যাপক প্রচার চালিয়ে পরিবেশের রক্ষকদের হত্যা করেছেন। আমাজন উজাড় করে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে বিশ্বের জনগোষ্ঠীকে বিপন্ন করে তুলছেন। আমাজনকে রক্ষার জন্য কাজ করে এমন আইন, সংস্থা ও ব্যক্তিদের পদ্ধতিগতভাবে অপসারণ, অকার্যকর ও নির্মূল করার চেষ্টা করছে বলসোনারোর প্রশাসন।
আরো অভিযোগ করা হয়েছে, প্রতিবছর আমাজনের চার হাজার বর্গকিলোমিটার রেইন ফরেস্ট ধ্বংসের জন্য দায়ী ব্রাজিলের এই নেতা। বলসোনারো ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্রাজিলে বনভূমি ধ্বংসের হার বেড়েছে ৮৮ শতাংশ।
মানবতার শত্রু বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবরটি শোনার পর কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে এলো অলরাইজ সংশ্লিষ্টদের প্রতি। বিশ্বব্যাপী তরুণরা জেগে উঠলে পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তনের দানব, বিজ্ঞানমূর্খ ট্রাম্প বা বলসোনারো কিংবা তাদের অনুসারীরা পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলতে কিছুটা থমকে যেতে পারে। (নিয়ন মতিয়ুল: পরিবেশ ভাবনা> ১২ অক্টোবর, ২০২১। এলিফেন্ট রোড, ঢাকা)
১৭ অক্টোবর, ২০২১।