আ. লীগ সরকার সর্বক্ষেত্রে আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠিত করেছিল
ইল্শেপাড় ডেস্ক
বহুল আলোচিত আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আয়নাঘর নামে খ্যাত ঢাকার তিনটি স্থান পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা; যেগুলো পূর্বে নির্যাতন কক্ষ এবং গোপন কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আয়নাঘর পরিদর্শন করতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরেন কমিশনের সদস্যরা।
পরিদর্শন শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়াত নামে একটা কথা আছে। গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠিত করে গেছে সর্বক্ষেত্রে। এটা (আয়নাঘর) তার একটা নমুনা। গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার তিনটি আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, মানুষের মনুষ্যত্ববোধ বলতে গিয়ে কিছু আছে, সেটা থেকে বহু গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিশ্চিহ্ন করার জন্য। যাতে মানুষের মনুষ্যত্ববোধ না থাকে। প্রতিটি জিনিস এখানে যা হয়েছে নৃশংস, যতটা শুনে অবিশ্বাস্য মনে হয় এটা কী আমাদেরই জগৎ? এটা আমাদেরই সমাজ? আমরাই এটা করলাম?
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা এটার শিকার হয়েছে তারা আমাদের সঙ্গে আছেন, তাদের মুখে শুনলাম কীভাবে হয়েছে। কোনো ব্যাখ্যা নাই। এটা বিনা কারণে। বিনা দোষে। কতগুলো সাক্ষী ঢুকিয়ে দিয়ে বলছে যে তুমি জঙ্গি। এগুলো বলে বলে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এরকম টর্চার সেল সারা বাংলাদেশজুড়ে আছে। আমার ধারণা ছিল শুধু এখানে আয়না ঘর বলতে কয়েকটা আছে। এখন শুনতেছি আয়না ঘরে বিভিন্ন ভার্সন সারাদেশজুড়ে আছে। কেউ বলে ৭শ, কেউ বলে ৮শ। সে সংখ্যাটা এখনো নিরূপণ করা যায়নি, কতটা জানা আছে, কতটা অজানা আছে।
বন্দিশালা ঘুরে দেখে অধ্যাপক ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, বীভৎস দৃশ্য। নৃশংস জিনিস হয়েছে এখানে।
তিনি বলেন, ‘যতটাই শুনি মনে হয়, অবিশ্বাস্য, এটা কি আমাদেরই জগৎ, আমাদের সমাজ? যারা নিগৃহীত হয়েছেন, তারাও আমাদের সমাজেই আছেন। তাদের মুখ থেকে শুনলাম। কী হয়েছে, কোনো ব্যাখ্যা নেই।’
মানুষকে সামান্যতম মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একজন বলছিলেন খুপড়ির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর থেকে তো মুরগির খাঁচাও বড় হয়। বছরের পর বছর এভাবে রাখা হয়েছে।’
সমাজকে এসব থেকে বের করে না আনা গেলে সমাজ টিকবে না বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি নতুন সমাজ গড়া, অপরাধীদের বিচার করা, প্রমাণ রক্ষার ওপর জোর দেন।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ন্যায়বিচার যেন পায়, সেটা এখন প্রাধান্য। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন বাংলাদেশ ও নতুন পরিবেশ গড়তে চাই। সরকার সে লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন করেছে। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করবে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ভুক্তভোগীদের বিনা কারণে, বিনা দোষে উঠিয়ে আনা হতো। সন্ত্রাসী, জঙ্গি বলে এখানে ঢুকিয়ে রাখা হতো। তিনি বলেন, ‘এই রকম টর্চার সেল (নির্যাতনকেন্দ্র) সারা দেশজুড়ে আছে। ধারণা ছিল এখানে কয়েকটা আছে। এখন শুনছি বিভিন্ন ভার্সনে (সংস্করণে) সারা দেশজুড়ে আছে। সংখ্যাও নিরূপণ করা যায়নি।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রমুখ।
এদিকে দুপুর ১টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি ফেসবুকে লিখেন, গত জুলাইয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার পর ডিজিএফআইয়ের এই টর্চারসেলে রাখা হয়েছিল আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। আজ সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে কক্ষটি চিনতে পেরেছেন তিনি। দেওয়ালের ওপরের অংশের খোপগুলোতে এক্সস্ট ফ্যান ছিল বলে জানান তিনি। পোস্টের সঙ্গে আসিফ মাহমুদ সজীবের একটি ও আয়নাঘরের দুটি ছবিও জুড়ে দেন তিনি।
সুচিস্মিতা তিথি আরেক পোস্টে লেখেন, গত জুলাইয়ে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার পর ডিজিএফআইয়ের এই টর্চারসেলে রাখা হয়েছিল নাহিদ ইসলামকে। আজ সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে কক্ষটি আইডেন্টিফাই করেন নাহিদ। এই কক্ষের একপাশে টয়লেট হিসেবে একটি বেসিনের মতো ছিল বলে জানান তিনি। ৫ আগস্টের পর এই সেলগুলোর মাঝের দেওয়াল ভেঙে ফেলা হয়, দেওয়াল রঙ করা হয়। এই পোস্টের সঙ্গেও নাহিদ ইসলামের একটি ছবি ও আয়নাঘরের কিছু ছবি দেন তিনি।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।