কচুয়ায় ‘প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রের’ উদ্বোধন

স্থানীয় জনগণের দোড়গোড়ায় উন্নত ও আধুনিক চক্ষুসেবা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের দোড়গোড়ায় উন্নত ও আধুনিক চক্ষুসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কচুয়া উপজেলায় প্রথম ‘প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র’ নামে একটি ভিশন সেন্টার গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও অরবিস ইন্টারন্যাশনাল হংকংয়ের সহযোগিতায় চাঁদপুরের মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল এই ভিশন সেন্টারটি পরিচালনা করবে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ দূরবর্তী শহরে না গিয়ে সহজেই চোখের আধুনিক চিকিৎসা করাতে পারবেন।
কচুয়া ভিশন সেন্টারটির ভার্চুয়্যাল উদ্বোধন করেন হংকংয়ের দাতারা। এ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়্যাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অরবিস হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী মেরী লাউ ও সিনিয়র ডিরেক্টর এলেন লাউ, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ ও মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চীফ কন্সালটেন্ট ডা. মো. আনোয়ার হোসেন শেখ। মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের অবৈতনিক সেক্রেটারী জেনারেল এমএ মাসুদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস্ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, সিনিয়র মেডিকেল স্পেশালিস্ট ডা. লুৎফুল হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহসিনা আফরোজসহ অন্যান্য কর্মকর্তা এবং চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়্যাল ট্যুরের মাধ্যমে ভিশন সেন্টারের কার্যক্রম অতিথিদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ বলেন, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেন। সেই থেকে এদেশের চক্ষু সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সার্বজনীন চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অরবিস সহযোগী চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে সারা দেশে ভিশন সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা করছে। তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসক্রিপশনসহ অন্যান্য চক্ষু রোগের চিকিৎসাও এখানে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
মাজহারুল হক বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের অবৈতনিক সেক্রেটারী জেনারেল এমএ মাসুদ ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয় জনগণের মাঝে প্রাথমিক পর্যায়ে চক্ষু সেবা সম্পর্কে ধারণা দেয়া ও তাদের উন্নত চিকিৎসা দিতে এই ভিশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। চক্ষু চিকিৎসায় ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ এই চিকিৎসা কেন্দ্রে নানাবিধ সেবামূলক কর্মকাণ্ড চালু থাকবে।
উদ্বোধনের পর হংকংয়ের দাতারা বলেন, আজ থেকে কচুয়ায় বসবাসরত জনগণ এই ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে সহজে ও কম খরচে চক্ষু রোগের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারবে। বিশেষ করে যারা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা কিংবা চাঁদপুর শহরে যেতে পারে না, তারা এই কেন্দ্র থেকে একই মানের চিকিৎসা সেবা পাবেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস্ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গ্রামাঞ্চলে মানুষের মানসম্মত চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রসারে মাজহারুল হক বিএনএসবি হাসপাতালের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুর চোখের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই স্থায়ী ‘চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮৫ সালে প্রথম বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি শুরু করে ২০০০ সাল থেকে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ১৪টি সহযোগী চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে ‘অরবিস’ এ পর্যন্ত ৩১,৮৬৭ জন চক্ষু চিকিৎসকসহ নার্স, প্যারামেডিকস্, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিকারবার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এছাড়া প্রায় ৭ লাখ মানুষের চোখ পরীক্ষা ও ৮০ লাখের বেশি রোগীর চিকিৎসা সম্পন্ন করেছে। বিনামূল্যে চোখে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২ লাখের বেশি রোগীর দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে ‘অরবিস’ বাংলাদেশে শিশু ও ডায়াবেটিকজনিত অন্ধত্বের উপর গুরুত্ব প্রদান করছে। একই সঙ্গে সব ধরনের পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব নিবারণে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ারের সাথে। ‘অরবিস’ প্রথম শিশু অন্ধত্ব নিবারণের জন্য ১৪টি বিশেষায়িত শিশু বান্ধব চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। যার মাধ্যমে দেশের শিশুরা চোখের চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ‘অরবিস’ সারাদেশে সরাসরি ২৯টি ভিশন সেন্টার স্থাপন ও সহযোগী চক্ষু হাসপাতালের আরো ৪০টিসহ মোট ৬৯টি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে চোখের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ‘অরবিস’ই এদেশে প্রথম সক্রিয় ও সফল চক্ষু ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি হাসপাতালে।

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।