করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ

ইলশেপাড় ডেস্ক
দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। ভাইরাসটিতে নতুন করে কারও মৃত্যু না হলেও গত কদিনে শনাক্তের পারদ ঊর্ধ্বমুখী। টানা দুদিন দৈনিক সংক্রমণ একশো ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা প্রতিরোধী টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত রোববার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১২৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আগের ২৪ ঘণ্টায়ও শনাক্ত হয়েছিল ১০৯ জন। টানা প্রায় আড়াই মাস দৈনিক সংক্রমণ একশোর নিচে থাকলেও গত দুদিনে তা আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। গত ২৫ মার্চ একদিনে শনাক্তের সংখ্যা ছিল একশোর ওপরে।
দেশে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে কোভিড কিছুটা বেড়েছে। কয়েক মাস আমরা দেখেছি দৈনিক ৩১ থেকে ৩৫ জন সংক্রমিত হতো। রোববার ১০৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন, সে তুলনায় বেশ বেড়েছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। মাস্ক পরা ভুলে গেলে চলবে না, আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।
কোভিড-১৯ এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা একটা স্বাভাবিক অবস্থায় আছি, যেন অস্বাভাবিক অবস্থায় না যাই, সে বিষয়ে সবার প্রচেষ্টা দরকার।
সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বমুখিতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক হোসেন সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, আমার মতে এটি করোনার পঞ্চম ঢেউ। মার্চ মাসে চতুর্থ ঢেউ শেষ হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে তিন মাস প্রতিরোধ সক্ষমতা থাকে। তিন মাস পর তা পুরোপুরি চলে না গেলেও আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। টিকার ক্ষেত্রেও তা-ই, টিকা নেওয়ার তিন-চার মাসের মধ্যে এর কার্যকারিতা কমতে থাকে। এজন্য নির্দিষ্ট সময় (তিন মাস) পর সংক্রমণ আবারও বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা সংক্রমণের বিষয়ে শিথিলতা দেখায়নি, কিন্তু আমরা (চলাফেরায়) তা দেখাচ্ছি। করোনা অ্যালার্ট এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ মাসে আবারও বসতে পারে।
ঊর্ধ্বমুখী এ সংক্রমণে লাগাম টানার ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাস্থ্য সচেতনতার তাগিদ দিয়ে ডা. মোস্তাক বলেন, জনসমাগম ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। ভাইরাসটি সংক্রামক হওয়ায় একজনের শরীর থেকে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারেন। ফলে এসময়ে সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিৎ।
করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রতিটি মানুষকেই ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন জানিয়ে এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, সর্বপ্রথম দেশের প্রত্যেক মানুষকে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হলেও এ টিকা দিতে হবে। বুস্টার ডোজ কম নিলেও সবাই যেন অন্তত দ্বিতীয় ডোজ টিকা পায়, দ্রুত সে ব্যবস্থা করতে হবে।
২৪ ঘণ্টায় ১২৮ নতুন শনাক্তসহ এ পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ২৪৩ জন। মহামারি শুরুর পর থেকে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১৩১ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৩৩৭ জন।
দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যু তথ্য জানায় আইইডিসিআর।
গেল সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়। এ পর্যন্ত মোট বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ নেওয়া টিকাগ্রহীতার ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বুস্টার ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে এমন সাড়ে ৪ কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার পর চার মাস পার হয়েছে এমন ১৮ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের বুস্টার ডোজ দিচ্ছে সরকার।

১৪ জুন, ২০২২।