কুমিল্লায় শচীন দেব বর্মনের জন্মবার্ষিকী পালিত

জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল
কুমিল্লায় উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ শচীন দেববর্মনের ১১৬ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরীর চর্থায় শচীনের পৈত্রিক বাড়িতে অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন। শনিবার (১ অক্টোবর) সকালে শিল্পীর বাড়ির আঙ্গিনায় স্থাপিত শচীনের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শিল্পীর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান।
এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ কুমিল্লার উপ-পরিচালক অর্পনা বৈদ্য, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাজমা আশরাফী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিউলি রহমান তিন্নী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজল হোসেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল আমিন সাদী, জেলা কালচারাল কর্মকর্তা সৈয়দ মুহম্মদ আয়াজ মাবুদসহ জেলা শিল্পকলা একাডেমি, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, ভাষা সৈনিক অজিত গুহ কলেজ, কালচারাল কমপ্লেক্স, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, যাত্রী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, কুমিল্লা কলেজ থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শিল্পীর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা (তৎকালীন ত্রিপুরা) শহরের উত্তর চর্থায় ত্রিপুরার রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শচীন। এই বাড়িতেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবির সাথে সংগীতের আসরে বসতেন কিশোর শচীনের সাথে। পরবর্তীকালে সংগীত জীবনে এসডি বর্মন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী খেতাব লাভ করেন তিনি। সংগীত নিয়ে ব্যস্ত জীবন কাটান ভারতের মুম্বাইয়ে। দেশভাগের পর মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁর এই পৈত্রিক বাড়িটিতে আসেননি শচীন। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
দীর্ঘ প্রায় ৭৫ বছর শিল্পীর এই পৈত্রিক বাড়িটি ছিলো পরিত্যক্ত অবস্থায়। দেখভাল ও সংস্কারের অভাবে বাড়িটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিলো। এরই মধ্যে বাড়ির কিছু অংশ হয়ে যায় বেদখল। এছাড়া বাড়িটির একটি বড় অংশ জুড়ে তৈরী করা হয় সরকারি হাঁস-মুরগীর খামার।
বাড়িটি উদ্ধার করে সংস্কারের জন্যে জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ২০১৪ সালে মাছরাঙা টেলিভিশনে বাড়িটির বেহাল অবস্থা নিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও হাসানুজ্জামান কল্লোলের বক্তব্য সহকারে পরপর দু’টি সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার হলে বিষয়টি নজরে আসে জেলা প্রশাসনের। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল নাগাদ জেলা প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বাড়িটি জেলা প্রশাসনের দখলে এনে এটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

০২ অক্টোবর, ২০২২।