চাঁদপুরের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ

পৌর নির্বাচনে তারুণ্যের জয়

 

ইল্শেপাড় রিপোর্ট

চাঁদপুর পৌরসভার সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তারুণ্যের জয় হয়েছে। মেয়রসহ সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে অধিকাংশ প্রার্থীই নবীন। এছাড়া বেশ কিছু প্রার্থী ছিলো রাজনীতিতে নতুন মুখ। বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে নিজদের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ভোটের মাঠে অংশ নেন তারা। তাদের অধিকাংশই ভোটের মাঠে ভোটের রাজনীতিতে জয়লাভ করতে সক্ষম হন। এমন পরিস্থিতিতে আগামির জেলার রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিতই লক্ষ্য করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

চাঁদপুর পৌর নির্বাচনকে ঘিরে মূলত জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটের জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতা ছিলো। এমন রাজনৈতিক সমীকরণে জেলা বিএনপির দলীয় প্রার্থীতা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মী শূন্যতার আরেক প্রমাণ রাখলো এ পৌর নির্বাচনে। ফলে হতাশা আর ভোট বর্জনসহ প্রাপ্তির খাতার শূন্যতা নিয়েই নিজেদের সন্তুষ্ট থাকতে হলো বিএনপিকে।

এদিকে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে প্রার্থী প্রদানেই কেবল মুন্সীয়ানা দেখায়নি, বরং ভোটের রাজনীতিতে কিভাবে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে হয় তা হলফ করে দেখাতে সক্ষম হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দলটি ভোটবিমুখ ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিতসহ নিজেদের জয় ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যা আগামিতে দলটির জেলার রাজনীতিতে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে।

এমন পরিস্থিতিতে জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পৌর নির্বাচনের ফলাফল বলে দেয় জেলার রাজনীতিতে আগামির আগাম বার্তা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পাবে ঐসব শীর্ষ ছাত্রনেতারা। যার ফলে দলটির অনেক ডাকসাইটে নেতা দলীয় রাজনীতি থেকে ছিট্কে পরার আশঙ্কাও করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে বিএনপির রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না আসলেও থাকবে ব্যাপক হঠকারী সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে ভোটের মাঠে দলটি অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় কিংবা কর্মীহীন নেতাদেরই ভোটের মাঠে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছে। বিশেষ করে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা, তিনি জনপ্রতিনিধি না হওয়া পর্যন্ত ভোটের মাঠে কম গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরই মাঠে রাখবেন বলে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ধারণা করছে।

এমন পরিস্থিতিতে চাঁদপুরের রাজনীতিতে বিএনপি নিজেদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে অনেকটাই হিমশিম খাবে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছে। বিপরীতে তারুণ্যনির্ভর আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়লে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

তবে বিশ্লেষকরা জেলা আওয়ামী লীগের আগামির তারুণ্যনির্ভর নেতা কিংবা জনপ্রনিধিদের সতর্ক বার্তাও দিচ্ছেন। তারা বলছেন, জনপ্রতিনিধিরা সময়ের সাথে উন্নয়নের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি কাজের মান ঠিক রাখতে পারলে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে আরো অনেকাংশেই বাড়াতে পারবেন। তবে কথিত সুশীল কিংবা তেলবাজ আর ফুলবাজদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকতে না পারলে আবার অনেকাংশেই নিজেদের ও দলের বিপদ ডেকে আনবেন সহজেই।

এমন পরিস্থিতিতে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতির কৌশল নির্ধারণে উভয় দলকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় নিজদের ব্যর্থতা নিয়েই জেলার রাজনীতিতে অবস্থান করতে হবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। যা উভয় দলের জন্য হবে বুমেরাং।

উল্লেখ্য, এই প্রথমবার তারুণ্যনির্ভর আওয়ামী লীগ নেতারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে চাঁদপুর পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। যারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে পৌরবাসীদের তাদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিলো ঐতিহ্য, নান্দনিক, বাণিজ্যিক ও পর্যটন নির্ভর নতুন এক চাঁদপুর গড়ে তোলা। যা এই মুহূর্তে এই পৌর পরিষদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে পৌরবাসী।

আগামি শনিবার (২৪ অক্টোবর) নবনির্বাচিত পরিষদের মেয়র হিসেবে শপথ নিচ্ছেন অ্যাড. মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আলী মাঝি, ২নং ওয়ার্ডে মো. মালেক শেখ, ৩নং ওয়ার্ডে আ. লতিফ গাজী, ৪নং ওয়ার্ডে মামুনুর রহমান দোলন, ৫নং ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, ৬নং ওয়ার্ডে সোহেল রানা, ৭নং ওয়ার্ডে শফিকুল ইসলাম, ৮নং ওয়ার্ডে অ্যাড. মো. হেলাল হোসাইন, ৯নং ওয়ার্ডে চাঁন মিয়া মাঝি, ১০নং ওয়ার্ডে মো. ইউনুছ শোয়েব, ১১নং ওয়ার্ডে ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, ১২নং ওয়ার্ডে হাবিবুর রহমান দর্জি, ১৩নং ওয়ার্ডে আলমগীর গাজী, ১৪নং ওয়ার্ডে খায়রুল ইসলাম নয়ন ও ১৫নং ওয়ার্ডে অ্যাড. কবির হোসেন চৌধুরী এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে ফেরদৌসী আক্তার; ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে খালেদা রহমান; ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে মিসেস ফরিদা ইলিয়াস; ১০, ১১ ও ১২নং ওয়ার্ডে আয়েশা রহমান; ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডে মোসাম্মৎ শাহিনা বেগম শপথ নেবেন।

২২ অক্টোবর, ২০২০।