চাঁদপুরে উদ্যোক্তার অভাবে গড়ে উঠছে না মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরে সরকারি পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষার বেশক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই মানসম্মত বেসরকারি কিংবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। বেসরকারি পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সময়ের চাহিদা পূরণে প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই তেমন জৌলুস দেখাতে পারছে না। যার কারণে সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে চাঁদপুর- বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। এজন্য অনেকে চাঁদপুরে দূরদর্শী রাজনৈতিক সঙ্কটের কথা বললেও কেউ কেউ দাবি করছেন উদ্যোক্তার অভাবেই গড়ে উঠেনি মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষার প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান।
চাঁদপুরের শিক্ষাবিদরা বলছেন, কিন্ডারগার্টেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যতো না সহজ, তারচেয়ে বেশি কঠিন হলো প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। এমন প্রতিষ্ঠান গড়তে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি জ্ঞানী-গুণী ব্যাক্তিবর্গের প্রয়োজন বেশি। তবে সময়ের প্রয়োজনে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই। এছাড়া প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিষ্ঠানের জন্য স্থায়ী ক্যম্পাসের যে পরিমাণ ভূমির প্রয়োজন তা নির্দিষ্ট স্থানে কিংবা একত্রে না পাওয়াকেও দায়ী করে আসছেন অনেকেই।
চাঁদপুর শহর তথা জেলায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ উচ্চ শিক্ষায় কম-বেশি ভূমিকা রাখলেও একটি স্বতন্ত্র বিশ^বিদ্যালয় এখনো গড়ে উঠেনি এ জেলায়। যদিও কয়েক বছর আগে বিশ^বিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমতি দিলে, সরকারের একনেক প্রস্তাবে অর্থ বরাদ্দসহ প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের অনুমতি দেয়।
ইতোমধ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়টি একাডেমিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ক্যাম্পাস চালু করতে ব্যর্থ হয়। যার পেছনে আছে সাবেক সরকারের অনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভূমি অধিগ্রহণ বাণিজ্য ও দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক জটিলতা। যার কারণে স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বিশ^বিদ্যালয়টির। এতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় চাঁদপুর জেলার।
একই সাথে গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালের অভ্যন্তরের খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। মেডিকেল কলেজটি ইতোমধ্যে তাদের প্রথম ব্যাচের ৪ বছর মেয়াদী কোর্স শেষ করে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা পেশার উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন বলে মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মানসম্মত শিক্ষার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে কিংবা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন এ জেলার শিক্ষাবিদরা। যদিও বেসরকারি পর্যায়ে হাজীগঞ্জ মডেল কলেজটি বেশ সুনামের সাথে চললেও আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করলে প্রতিষ্ঠানটি তার নিজস্ব জৌলুস হারায়। ফলে এ জেলায় তেমন মানস্মমত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সময়পযোগী বা দেশসেরা মেধাবী শিক্ষার্থী বের হয়ে আসছে না। যার কারণে জেলায় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার দাবিটি দিন-দিন জোড়ালো হয়ে উঠছে।
অপরদিকে অনেকেই বলছেন, প্রাইভেট পর্যায়ে চাঁদপুরে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন দেশবরেণ্য উদ্যোক্তা ড. মো. সবুর খান। এই উদ্যোক্তা চাইলে এ জেলায় প্রযুক্তিখাতের একটি প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তুলতে পারেন। তবে তার কতটা সদিচ্ছা আছে তা জানা সম্ভব হয়নি।
যদিও চাঁদপুরের এই বরেণ্য ব্যাক্তি দেশের প্রযুক্তি ও শিক্ষাখাতে ব্যপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। শিক্ষা খাতে অবদানের জন্য খ্যাতি পেয়েছেন বিশ^ব্যাপী। ব্যাক্তিগতভাবে তিনি গড়ে তুলেছেন- ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন, জীবিকা প্রকল্প। এছাড়া ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্স (ডিআইএসএস)-এর মাধ্যমে কয়েকশ’ অনাথ ও পথশিশুকে ভরণ পোষণ ও শিক্ষার দায়িত্বগ্রহণ করেছেন।
বর্তমান তারুণ্যের আগামির বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে চাঁদপুর জেলার এ প্রজন্মকে জ্ঞানের রাজ্য ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুগপোযুগীর পাশাপাশি বেসরকারি কিংবা প্রাইভেট প্রযুক্তি নির্ভর বিশ^বিদ্যালয়ের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সচেতন মহল।

৩০ নভেম্বর, ২০২৪।