
এসএম সোহেল
যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আজ শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের তথ্যমতে করোনা ভাইরাসে গতকাল পর্যন্ত মোট ৩০ জনের মৃত্যু ও ৪৮২ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর জানিয়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা মতলব উত্তর উপজেলায় ২ যুবককে করোনা আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা দু’জনই নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে এসেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা থেকে চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান। যদিও তখনো পর্যন্ত চাঁদপুরে একজনও করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি। কিন্তু রাতেই জানা যায়, মতলব উত্তরে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক যুবক করোনা আক্রান্ত। সে ঐ এলাকার জামাই। আজ মতলব উত্তরে আরো এক করোনা আক্রান্ত যুবক চিহ্নিত হয়। সেও নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছে। নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকানপাট ও গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ২৬ মার্চ থেকে সব দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অথচ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে চাঁদপুরে সন্ধ্যার সাথে সাথে পুরো শহর সুনশান নীরব হলেও প্রতিদিন দিনের বেলায় মিলছে বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষের আনাগোনা। গত কয়েকদিন ধরে দেখা গেছে, চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। সকাল হওয়ার সাথে শহরের বিভিন্ন স্থানের হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট ও বিভিন্ন সড়কে ছোট বড় যানবাহন এবং মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায়। তাই এসব মানুষের উপস্থিতিতে করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে জেলাবাসী।
বাংলাদেশে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। একই সাথে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাঁদপুরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় এবং শহর কিংবা গ্রামে প্রত্যেক স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গণজমায়েত এড়াতে বিভিন্ন দোকান-পাট ও যানবাহন চলাচল না করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ থেকে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা কঠোর নজরদারি জোরদার করেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী সদস্যদেরও টহল লক্ষ্য করা গেছে। যাতে করে শহরে কোন প্রকার যানবাহন এবং মানুষজন বের না হন।
প্রথম দু’তিনদিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে রাস্তা ঘাটে তেমন কোন যানবাহন কিংবা মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি শহরের কোন স্থানেই চায়ের দোকানসহ তেমন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে দেখা যায়নি। প্রশাসনের এমন ঘোষণার কয়েক দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে দেখা গেছে চাঁদপুর শহরের শপথ চত্বর কালী বাড়ি, বাসস্ট্যান্ড, ছায়াবাণী মোড়, নতুন বাজার, পুরান বাজার, মিশন রোড, চিত্রলেখা মোড়, চেয়ারম্যান ঘাটা, ওয়্যারলেসসহ শহরের বিভিন্ন সড়কে ট্রাক পিকআপ ভ্যান, রিক্সা অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কে চলতে দেখা গেছে। এসব যানবাহনের সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের উপস্থিতিও।
সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর নমুনা সংগ্রহ এবং রোগী পরিবহনে জেলায় তিনটি যানবাহন প্রস্তুত রাখার নির্দেশ মোতাবেক গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি গাড়ির মেধ্য জেলা প্রশাসন দু’টি মাইক্রোবাস ও আমাদের পক্ষ থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়।
তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাসের শঙ্কায় চাঁদপুর জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে ১০০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া অতিরিক্ত হিসেবে প্রত্যেক উপজেলায় একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, করোনা প্রতিরোধে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন, জরুরি মেডিক্যাল দল, ইউনিয়ন পর্যায়ে মেডিক্যাল দল, মনিটরিং সেল গঠন, প্রত্যেক উপজেলায় ৭-৮ বেডের আইসলোশেন ওয়ার্ড প্রস্তুত করণসহ চিকিৎসা সেবার জন্য সব প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেনো ঘর থেকে না হয়, এজন্য প্রশাসনে পক্ষ থেকে ত্রাণ যাবে বাড়ি কার্যক্রম হাতে দেয়া হয়েছে। সেখানে সবার বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে সবাই ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী ও পুলিশ মাঠে টহলরত রয়েছে।