চাঁদপুরে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছিলো পবিত্র মাহে রমাদান। সেই কোরআন নাজিল ও আত্মশুদ্ধির মাস শেষে চাঁদপুর জেলাজুড়ে ধর্মীয় পরিবেশে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। গত ৩১ মার্চ সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় চাঁদপুর পৌর ঈদগাহ মাঠে।
নামাজে ইমামতি করেন হাজি শরীয়ত উল্লাহ (রহ.) এর সপ্তম পুরুষ বাহাদুরপুরের পীর হাফেজ মাও. আব্দুল্লাহ মো. হাসান। নামাজ ও খুৎবা পাঠ শেষে মুসলিম উম্মাহ, দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মজলুম ও নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।
এই ঈদ জামায়াতে নামাজ আদায় করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে বহু বছর আগ থেকেই সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে আসছে। বিশ্বের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকুক, এটি প্রত্যাশা করছি। ঈদুল ফিতর উদযাপনে জেলাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা থাকায় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
ঈদ জামায়াতে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবং দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাড. ইকবাল-বিন-বাশার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কুমিল্লা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. জয়নাল আবেদীন এবং চাঁদপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অ্যাড. মো. শাহজাহান মিয়াসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যাক্তিরা নামাজ আদায় করেন।
এদিকে সকাল ৮টায় চাঁদপুর পুলিশ লাইন্স জামে মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সাথে নামাজ আদায় করেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব। নামাজ শেষে তিনি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
একই সময় প্রায় ১০ হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়াম মাঠে। সেখানে নামাজে ইমামতি করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের শেরেবাংলা ছাত্রাবাস মসজিদের খতিব মাও. আনম মুহিবুল্লা। সকাল সোয়া ৮টায় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে। সেখানে ইমামতি করেন গাছতলা দরবার শরীফের পীর আল্লামা খাজা অলিউল্লাহ।
এছাড়া পুরাণবাজার মধুসূদন হাই স্কুল মাঠে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইমামতি করেন পুরাণবাজার ঐতিহাসিক বড় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি ইব্রাহিম খলিল। এই জামায়াতে নামাজ আদায় করেন চাঁদপুর জেলা বিএনপি সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলা সদরে চাঁদপুর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় অধিকাংশ ঈদ জামায়াতে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখে।
ঈদে প্রত্যেক বাড়িতে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার। রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকে বিশেষ খাবারের আয়োজন।
এ দিন ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দ ভাগভাগি করে নেন। তাই শান্তিপূর্ণ ও সৌহাদ্যপূর্ণ সমাজ গঠনে ঈদুল ফিতরের আবেদন চিরন্তন। ঈদুল ফিতরের শিক্ষা আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা। অপরদিকে ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ ঘরে সাধ্যমত খাবার খেয়ে ঘুরতে বের হয় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নারী-পুরুষ।
এদিকে বিকেলে শহর ও শহরতলীর লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসেন তিন নদীর মোহনা বড় স্টেশন মোলহেডে। সেখানে দর্শনার্থীদের পদাচরণায় মুখরিত হয়ে উঠে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রিক এলাকায় ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে মানুষ ভীড় জমায়।

০৯ এপ্রিল, ২০২৫।