চাঁদপুরে প্রশাসনের তৎপরতায় লকডাউন শুরু

সংক্রমণ বাড়ছেই, নেই জনসচেতনতা

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুর শহরে লকডাউনের প্রথম দিনে গতকাল প্রশসনের তৎপরতায় ছিলো মোটামুটি সন্তোষজনক। উপজেলা শহরগুলোতে প্রশাসনের কম-বেশি তৎপরতা থাকলেও সর্বসাধারণের মাঝে ছিলো না তেমন কোন সচেতনতা। এ নিয়ে কোথাও কোথাও প্রশাসনের সাথে সর্বসাধারনের মৃদু বাকযুদ্ধ হতেও দেখা গেছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবেই প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। যদিও চাঁদপুর শহরে সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে শহরের হকার্স মার্কেট ও কালীবাড়ি মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেতে দেখা গেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবিদা সিফাতকে।
এদিকে চাঁদপুর শহরের হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী ও তাদের দোকান কর্মচারীরা ‘লগডাউন মানি না, স্বাস্থ্য বিধি মানবো, দোকানপাট খুলবো’ শ্লোগান দিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলে কয়েক শতাধিক ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা অংশ নেন। পরে প্রশাসনের লোকজন তাদের শান্ত করেন।
লকডাউনের প্রথম দিনে গতকাল সোমবার চাঁদপুর শহর একপ্রকার ছিলো গাড়িশূন্য। কিছু সিএনজি ও অটোরিক্সা চলাচল করতে চাইলেও ট্রাফিক পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। যার ফলে পুরো শহর যানবাহন শূন্য হয়ে পরে। এতে করে দূরপাল্লার কিছু মানুষের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তবে ক্ষুদ্র পরিবহনের চালকরা যদিও দাবি করছে এবারের লকডাউনে কেবল আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে। তাদের জন্য কোন বাঁধা-নিষেধ ছিলো না। তারপরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শহরের অভ্যন্তরে কোন ধরনের যাত্রী পরিবহন করতে দেয়নি। যার কারণে তাদের অলস দিনযাপন করতে হয়েছে।
এদিকে গতকাল করোনা সংক্রমণ রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৫ জনের। আর মারা গেছেন ৫২ জন। আগের দিন রোববার করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ৮৭ জনের, যা দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এক দিনে ছিল সর্বোচ্চ। গত রোববার করোনার সংক্রমণে মারা গেছেন ৫৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়ছে।
অপরদিকে জেলার সবগুলো উপজেলা শহরে প্রশাসনের নজরদারি কিংবা তৎপরতা লক্ষ্যণীয় হলেও স্থানীয় হাট-বাজারগুলো ছিলো উপেক্ষিত। যার কারণে পুরো জেলার স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে লকডাউনের তেমন প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। সাধারণ মানুষ আগের মতো জনসমাগমের মধ্যে দিয়েই তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে।
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কারণে সরকার গতকাল থেকে ৭ দিনের ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে। লকডাউনে গণপরিবহন চলাচলে ছিলো নিষেধাজ্ঞা। তবে জরুরি কাজের জন্য সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকছে। কেবল শহরের ব্যবসায়ীরা তাদের মার্কেট খোলা রাখার জন্যই কেবল বিক্ষোভ করে।
চলমান পরিস্থিতিতে চাঁদপুর জেলায় গত দু’দিনে (শনি ও রবিবার) ৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই দুই দিনে মোট ৪শ’ ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। রোববার পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩শ’ ৮৩ জন। আর সারা দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৪৩৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ৩১৮ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৪শ’ ১৪ জন।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে চিকিৎসকরা দাবি করছে, বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। সতর্কতার জন্য পরিবারের বড়দের দায়িত্বশীল হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এজন্য তারা পরামর্শ দিচ্ছেন শিশুদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহিত করতে। তাদের যেন ঘরের কাজে যুক্ত করা হয়। পাশাপাশি লোকসমাগম কম হয় এমন জায়গায় খেলতে নিয়ে যেতে হবে। যাতে শিশুদের সচল ও সক্রিয় রাখা যায় রোগ প্রতিরোধের জন্য।
চাঁদপুরের লকডাউনের প্রথম দিনের সার্বিক বিষয় নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবিদা সিফাত জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমরা জনগণদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না তাদের আমরা জরিমানার আওতায় আনছি।
০৬ এপ্রিল, ২০২১।