ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরে বিধি-নিষেধের লকডাউনে কোথাও কোনো বাঁধা নেই। জেলায় নৌ, রেল ও গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের গাড়িই চলছে অবাধে। কেবলমাত্র চাঁদপুর শহরের দু’একটি পয়েন্ট ছাড়া কোন সড়কে নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তৎপরতা। প্রায় সব ধরনের দোকানপাট খুলছে এক সাটার করে। হাট-বাজারসহ জেলার সর্বত্রই লেগে আছে ভিড়।
তবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তৎপরতা চলছে জেলাজুড়েই। তাদের কর্মতৎপরতায় বিভিন্ন হাট-বাজার বিকেল ৩টা নাগাদই বন্ধ হয়ে যায়। চাঁদপুর শহরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, উপজেলাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
কিন্তু জেলা প্রশাসনের দুই অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্রথম দিকের মতো সাঁড়াশি অভিযান না হলেও তাঁরা থেমে নেই। দিন-রাত লকডাউন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কাজ করছেন তাঁরা। অপরদিকে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশও প্রশাসনিক কর্মব্যস্ততা, ত্রাণ বিতরণসহ লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছেন অবিরাম।
এদিকে রোববারও (৮ আগস্ট) চাঁদপুরে করোনায় আরো ৭ জনের প্রাণ গেছে। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে এই সাত জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে করোনায় একজন ও উপসর্গ ছয়জনের মত্যু হয়। রোববার দুপুর ২টা পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত শনিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ১শ’ ৯৩ জন। আর সারা দেশে করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) আরও ২শ’ ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ১০ হাজার ২৯৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।¯ ^াস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৫। মোট মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজার ৬শ’ ৫২ জনের।
অপরদিকে বুধবার থেকে সব কিছু খুলছে। চলবে গণপরিবহনও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে আসনসংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন বা যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এ বিষয়ে রোববার আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
দীর্ঘদিন ধরে ‘কঠোর’ বিধিনিষেধের পর আগামি বুধবার থেকে শর্তসাপেক্ষে অফিস ও গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে বলা হয়, গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার থেকে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধানের আগেই চাঁদপুরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। প্রশাসনিক তৎপরতা কম থাকায় এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকছে। জেলার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন দিনের নির্ধারিত একটি সময়ে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। এ সময়ে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে জরিমানা করতে দেখা যায়।
চাঁদপুরের উপজেলাগুলোর শহরের অধিকাংশ মার্কেট বন্ধ থাকলেও মূল ফটকের বাইরে দোকানের বিক্রয়কর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে দোকানে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়া চাঁদপুর শহরের প্রায় সব ধরনের দোকানপাট খুলেতে দেখা গছে।
পুরান বাজারের মসজিদ পট্টির ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, এখন পলায়া পলায়া বেচাকেনা করছি। পুলিশ আসলে সাটার বন্ধ করি। তারাও জানে আমরা দোকান করি। কিন্তু পুলিশ আর কত ধরবো? অনেক সময় সাটার খোলা থাকলেও তারা কিছু বলতেছে না। সবাইরে নিয়া তো বাঁচতে হইবো। দোকান বন্ধ রাখলে তো কোনো ইনকাম নাই।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে আগামি ১১ আগস্ট থেকে যা খোলা যা বন্ধ থাকছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছুই খোলা থাকবে। তবে বন্ধ থাকবে পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। সরকার আটটি শর্তের মাধ্যমে সব সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলো:
১. সব সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩ সড়ক, রেল ও নৌপথে আসন সংখ্যার সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন/যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে সড়ক পথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দফতর/সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।
৪. শপিংমল/মার্কেট/দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে।
৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা চালু থাকবে।
৬. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।
৭. সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
৮. গণপরিবহন, বিভিন্ন দফতর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
০৯ আগস্ট, ২০২১।
- Home
- চাঁদপুর
- চাঁদপুর সদর
- চাঁদপুরে বিধিনিষেধ মানছে না কেউ