চাঁদপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালিত

বঙ্গবন্ধু সারাবিশ্বের শোষিত মানুষের নেতা ছিলেন
………..শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি

এস এম সোহেল
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করা হয়েছে। গত সোমবার (১৫ আগস্ট) সূর্যোদয়ের সাথে সব সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধ-নমিতভাবে উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়।
সকাল ১১টায় চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, শুধু বাংলাদেশের নয়, বঙ্গবন্ধু সারাবিশ্বের শোষিত মানুষের নেতা ছিলেন। আজ জ্বালানি নিরাপত্তার কথা বলি আর যাই বলি, বঙ্গবন্ধু সবকিছুই আমাদের জন্য করে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শোষণের হাত থেকে আমাদের মুক্তি দিয়ে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আজ বৈশ্বিক একটি সমস্যা চলছে। কোভিড থেকে বেরিয়ে আসার পথে বৈশ্বিক যুদ্ধের ফলে সারাবিশ্বে জ্বালানি ও খাদ্যের সঙ্কট চলছে। বিশ্বের পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে আমাদেরও চলতে হবে। তবুও আমাদের অর্থনীতির অবস্থা এখন অনেক ভালো আছে। প্রতিবার নির্বাচন এলেই একটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরা চিরজীবনই ষড়যন্ত্রকারী।
তিনি বলেন, যদিও বলা হয় জেনারেল জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। যদি তাই হবে এবং তিনি যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতেন, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের এবং আমাদের প্রাণের স্লোগান যে স্লোগান দিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি এত রক্তের বিনিময়ে, সেই জয় বাংলা তিনি নিষিদ্ধ করতেন না। বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করা হতো না। ৭ মার্চের যে অবস্মরণীয় ভাষণ দিয়ে জাতি ও রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, পৃথিবীতে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, সেই ভাষণ নিষিদ্ধ হতো না। বাংলাদেশ বেতার, রেডিও বাংলাদেশ হতো না। এমনকি তারা জাতীয় সঙ্গীতকেও পরিবর্তন করার চেষ্টা চালিয়েছিল।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও পিবিআই পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভিন।
দৈনিক সুদীপ্ত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এমআর ইসলাম বাবুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, পৌরসভার মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার প্রমুখ।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো- সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠে স্থাপিত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। প্রথমেই পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন। পরে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, চাঁদপুর পৌরসভা, চাঁদপুর প্রেসক্লাব, চাঁদপুর সদর হাসপাতাল, সরকারি কলেজ, পিবিআই চাঁদপুর, চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার, চাঁদপুর জেলা কারাগার, চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চাঁদপুর, ফায়ার সার্ভিস এ- সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুর, চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁদপুর জেলা মৎস্য অধিদপ্তর, ব্র্যাক চাঁদপুর, চাঁদপুর জেলা সড়ক বিভাগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদপুর এবং স্কুলসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তর ও সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে শোক র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এসে শেষ হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিল- ৭-১৪ আগস্ট মধ্যে বই পড়া, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা, সরকারি শিশু পরিবার ও মুক-বধির স্কুলে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, বাদ যোহর দোয়া ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনা, বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও বিকেল ৫টায় নাটক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ উদ্যোগে শোক দিবসের নানা কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও শিশু একাডেমি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

১৭ আগস্ট, ২০২২।