চাঁদপুরে যাত্রীবাহী লঞ্চে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

ইলশেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালে (লঞ্চ ঘাট) যাত্রীবাহী লঞ্চে উপেক্ষিত হয়ে আসছে স্বাস্থ্যবিধি। এতে করে এ জেলায় বাড়ছে করোনার ঝুঁকি। যাত্রীরা বলছে, লঞ্চ মালিকদের অতি মুনাফার লোভেই মানছে না সরকারের স্বাস্থ্যবিধির কোন নির্দেশনা।
এমন পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকার সাথে চাঁদপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অবাধ নৌ যোগাযোগের সুযোগে চাঁদপুরে করোনার প্রকোপ বেড়েই চলছে লাফিয়ে-লাফিয়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছেন যাত্রীরা।
চাঁদপুর নৌ-ঘাট হয়ে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী লঞ্চ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নৌ-টার্মিনালে যাতায়াত করে থাকে। এতে করে প্রতিদিনই ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। নৌ-রুটে যাত্রীদের ভ্রমণের জন্য সরকার ইতোমধ্যে ঘোষণা করছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা জন্য।
এজন্য মোট যাত্রীর অর্ধেক নিয়ে লঞ্চে এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে যাবে। যাত্রীরা মাস্ক পরিধান করে উঠবে। পাশাপাশি লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের হ্যান্ড স্যনিটারাইজারসহ নির্ধারিত সময় পর-পর লঞ্চকে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। সরকারের এমন নির্দেশনা মিলছে না কোন লঞ্চেই।
লঞ্চ ভ্রমণকারী যাত্রীরা অভিযোগ করছে, দেখার দায়িত্ব যাদের তাদের কোন তদারকি না থাকায় অবাধেই লঞ্চগুলো নির্ধারিত যাত্রীর দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। জীবাণুনাশক ছিটানো তো দূরে থাক হ্যন্ড স্যানিটারাইজারই রাখছে না লঞ্চগুলো। বরং কে কতো যাত্রী তুলবে তার প্রতিযোগিতা করেই সময় পার করছে লঞ্চগুলোর স্টাফরা।
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-পুলিশ বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের তেমন কনো তদারকি লক্ষ্য করছেন না যাত্রী কিংবা লঞ্চ কর্তৃপক্ষও। যার কারণে এমন পরিবেশ বিরাজ করছে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে। যাত্রীরা বলছে, আরামদায়ক ভ্রমণের কারণেই গত এক দশকে চাঁদপুরে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ।
এমন সুযোগে মালিক কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত মুনাফাকে কাজে লাগিয়ে বিলাসবহুল লঞ্চ নিয়ে আসছেন প্রতিনিয়তই। এমন সুযোগে যাত্রীরাও হুমড়ি খেয়ে পরছে এসব বিলাসবহুল লঞ্চগুলোতে। দেশে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
এদিকে দেখা যায়, প্রতিদিন বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে চাঁদপুর থেকে ঢাকা ছাড়ছে সোনারতরী-২ লঞ্চটি। ঐ লঞ্চে যেমন স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা করোনা প্রতিরোধক কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না তারা। এসব বিষয় জিজ্ঞাসা করলে লঞ্চের দায়িত্বরতরা ঔদ্ধত্য আচরণ করে। লঞ্চের মালিক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় তারাও নিজেদের ‘ড্যাম কেয়ার’ ভাব নিয়ে সবার সাথে আচরণ করেন। এছাড়া যাত্রীদের ঢাকা যাবার পছন্দের সময় হওয়ায় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে ঐ কোম্পানীর লক্কর-ঝক্কর মার্কা একটি লঞ্চে যাত্রীদের ভ্রমণ করতে হচ্ছে। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যাত্রীরা।
চাঁদপুরের সর্বসাধারণ বলছেন, কিছু লঞ্চ মালিকের অতি মুনাফার কারণে এ জেলার মানুষ ভুক্তভোগী হতে পারে না। বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপ থেকে চাঁদপুরকে রক্ষার জন্য এখনি সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়া উচিত। অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহনকারী চিহ্নিত লঞ্চগুলোকে আইনের আওতায় আনার দাবি সবার।
পাশাপাশি সবার আগে যাত্রীদের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাদের মুনাফার বিষয়টি চিন্তা করবে। এজন্য চাঁদপুর নৌ-পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন দৃশ্যমান দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা করছেন নৌ-যাত্রীরা।

০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।