চাঁদপুরে লকডাউন বাস্তবায়নে ডিসি, এসপি ও সদর ইউএনও’র তৎপরতা

লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক বেগম অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা শাহনাজ স্মৃতিকে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে পর্যবেক্ষণ করছেন।

শাহ্ আলম খান
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চাঁদপুরে চলছে সরকার ঘোষিত চতুর্থ দিনে কঠোর বিধি-নিষেধ (লকডাউন)। এতে চাঁদপুর শহরেজুড়ে টহলে রয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এছাড়া কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে তৎপর থাকতে দেখা গেছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা শাহনাজ স্মৃতি, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হেলাল চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আসিফ মহিউদ্দিন ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবমিলিয়ে কঠোর বিধি-নিষেধের চতুর্থ দিনে অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে চাঁদপুর শহরের রাস্তাঘাট এবং বন্ধ ছিল দোকান-পাট।
সোমবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা-ঘাটগুলোতে হাতেগোনা দু’য়েকটি রিকশা ছাড়া চোখে পড়েনি সাধারণ মানুষের চলাচল। তবে মাঝে-মাঝেই দেখা মিলেছে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি সেবাদানকারী কিছু পরিবহনের।
এছাড়া জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে মুদি দোকান খোলা দেখা গেছে। তবে বন্ধ ছিল জেলা শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটের দোকান-পাট। এছাড়া বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহনগুলো।

ফাঁকা রাস্তাঘাট, বন্ধ দোকান-পাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা আমেনা বেগম জানান, আমার স্বামী অসুস্থ। স্বামীকে নিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। অনেক কষ্টে বাড়ি থেকে অটোরিকশায় করে সদর হাসপাতাল এসেছিলাম। ডাক্তার দেখাতে দেরি হওয়ায় অটোরিকশা অন্য যাত্রী নিয়ে চলে গেছে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনতে কালিবাড়ি এসেছি। কিন্তু এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কোনো রিকশা পাচ্ছি না। এখন যাব কিভাবে, সেই চিন্তায় আছি।
চাঁদপুর পৌর এলাকার পুরাণবাজারের বাসিন্দা মিজান বেপারী বলেন, আমি চাকরি করি প্যাথলজিতে। বাড়ি থেকে না বের হলে বুঝতাম না কতো কঠোর বিধি-নিষেধ চলছে। সকালে আসার পথে অনেকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। পুরো শহর একেবারেই ফাঁকা, আসার সময়ও একই চিত্র ছিল।
এদিকে জেলা শহরের প্রবেশ পথের চেকপোস্টগুলোতে বাইরে থেকে আসা প্রত্যেককেই পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন প্রমাণে ব্যর্থ হলে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের দ্রুত কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার নির্দেশনা দিচ্ছেন তারা।
কঠোর বিধি-নিষেধের বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা পালনে জেলা পুলিশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
চাঁদপুর জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাঁদপুর সদরের সার্বিক লকডাউন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ও চেকপোস্টের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলা ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা পুলিশের সব ইউনিটের কর্মতৎপরতা ও টহল প্রদান অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া, অযথা ঘোরাফেরা বন্ধ করা, দোকান-পাট খোলা না রাখা, জনসমাগম নিষিদ্ধসহ জনসাধারণকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি চলমান।
কঠোর লকডাউনের বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বেগম অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, সরকার ঘোষিত কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন প্রথম থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে জনগণকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং ও মাস্ক বিতরণও করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন মাঠে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কিন্তু যারা আইন অমান্য করে বাইরে বের হচ্ছেন এবং বাইরে বের হওয়ার সঠিক কারণ দেখাতে পারছেন না তাদের বিরুদ্ধে আমরাও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এর আগে সকালে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ চাঁদপুর জেলার লক-ডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। তিনি বিনা প্রয়োজনে যারা মোটরসাইকেল, অটোরিকশা ও রিক্সা নিয়ে বের হয়েছেন তাদের গাড়িগুলো আটক করে মামলা করার নির্দেশ দেন। যারা চিকিৎসার জন্য, টীকা দেয়ার জন্য ও জরুরি পণ্য পরিবহনের কাজে বের হয়েছেন তাদের সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।

২৬ জুলাই, ২০২১।