চাঁদপুরে সর্বাত্মক লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্নআয়ের মানুষ

ইল্শেপাড় রিপোর্ট
দিন যত গড়াচ্ছে করোনার গতি ততোই বাড়ছে। সংক্রমণের সাথে বাড়ছে মৃত্যুর রেকর্ডও। গতকাল সোমবার চাঁদপুর জেলায় সর্বোচ্চ ১শ’ ৫৪ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে। শহর থেকে গ্রামে এখন মানুষের ঘুম ভাঙছে স্বজনের কান্নায়। বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে মানুষের হাসপাতালের বারান্দায়। আইসিইউ আর অক্সিজেনের হাহাকারের সাথে জীবন বাঁচিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সারা দেশের মানুষের সাথে চাঁদপুরের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষজন।
দেশের চলমান এই সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন কার্যকরের পর থেকে চাঁদপুরেরও নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। লকডাউনে এসব মানুষজনই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কিংবা দ্রারিদ্যতা রোধে সরকারের তেমন উদ্যোগও দেখছে না সাধারণ মানুষজন। তবে কঠোর লকডাউন চলাকালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ হিসেবে নিম্ন আয়ের কয়েক হাজার মানুষকে ৭ কেজি করে চাল দিয়েছেন। যা দিয়ে অন্তত কিছুটা হলেও তারা সহযোগিতা পাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। এছাড়া অন্য কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
চলমান এই সর্বাত্মক লকডাউনে চাঁদপুরসহ সারাদেশে সড়কে থাকছে বেশিরভাগই খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যারা প্রতিদিনের আয় সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। তারা নিম্ন আয়ের মানুষ। হকার, মজুর, গাড়ি চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কল-কারখানার শ্রমিক ও দিনমজুর। যাদের অনেকের এই দীর্ঘ লকডাউনে বাঁচার অবলম্বন অনেক আগেই হারিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই শাক-সবজি বা আম নিয়ে ফেরি করার চেষ্টা করছেন কেউ-কেউ। কিন্তু লকডাউনের কারণে নেই ক্রেতা। ফলে দিনশেষে তাদের ফিরতে হয়েছে প্রায় খালি হাতেই।
বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে সরকার আরোপিত কঠোর লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষজনই। যাদের বেশিরভাগ মানুষই এখন না খেয়ে দিন যাপন করছে।
গেল বছরের লকডাউনের পর একটি বেসরকারি এক গবেষণা সূত্রে দেখা গেছে, দুই মাসের লকডাউনের পর দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে বহুগুণ। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্রদের ঘরে ঘরে খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই খাদ্য সহায়তা। পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের জন্য স্বল্প পরিমাণের রেশনের মত খাদ্য ও জরুরি পণ্যের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন সচেতন মহল। সাথে সরকার বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার মত দিয়েছেন অনেকেই।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বলছে, লকডাউনটা যদি কঠোরভাবে চলমান থাকে সেক্ষেত্রে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে সাধারণ মানুষ। এজন্য কার্যকর সমাধান হলো- লকডাউনটা যাতে আর দীর্ঘায়িত না হয়। কারণ সরকার ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত এ লকডাউন ঘোষণা করে। পরে তা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করে। এতে করে জনমনে ধারণা যেহেতু সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে তাহলে কি লকডাউনও আরো বাড়ছে? তাহলে কি হবে এসব দিন আনে দিন খায় সাধারণ লোকজনের?
এজন্য এসব লোকজনের জন্য দ্রুত সরকারি ব্যবস্থা দরকার। সাথে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা করে যথেষ্ট বরাদ্দের মাধ্যমে নিম্নআয়ের মানুষের দুর্দশা লাঘব করার চিন্তা করা প্রয়োজন সরকারের। এছাড়া সুষম বন্টনের নিশ্চিত করতে না পারলে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্দশা বাড়তেই থাকবে, যা কিছুতেই কমবে না। সাথে সামজিক বৈষম্য দ্রুত দৃশ্যমান হতে থাকবে।
১৩ জুলাই, ২০২১।