স্টাফ রিপোর্টার
প্রতি বছরের মতো এবারো সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও সনাতন ধর্মের ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দুর্গাপূজার আয়োজন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শেষ সময়ে মাটির প্রলেপ, রঙ তুলির আঁচড় এবং সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতীমা শিল্পীরা।
এদিকে পূজাকে সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসন নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এর বাইরে কেন্দ্রিয় নির্দেশনায় মাঠে থাকবে পূজা পরিষদ ও ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেও জানান স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) শহরের পালপাড়া মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতীমা ও বিগ্রহে রঙ তুলির আঁচড় দিচ্ছেন প্রতীমা শিল্পীরা।
চাঁদপুর সদরের আশিকাটির স্বচ্চিদানন্দ শ্যাম সুন্দর হরিসভার সভাপতি হারাধণ চন্দ্র দত্ত জানান, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এবং শুভ্র কাশফুল জানান দিচ্ছে শরতের শারদীয়া দুর্গোৎসবের। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ইতোমধ্যেই চাঁদপুরের ২২২টি পূজামন্ডপে প্রতীমা ও অন্যান্য দেবতার বিগ্রহ তৈরিতে মাটির প্রলেপ ও রঙ তুলির আঁচড়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। কোথাও কোথাও প্রতিমায় শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার পড়াচ্ছেন শিল্পীরা। পূজামন্ডপগুলোর আলোকসজ্জ্বা ও সৌন্দৗর্য বর্ধনসহ নিরাপত্তাজনিত কাজকর্মেও সনাতনীদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
চাঁদপুর জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব পার্থ গোপাল দাস জানান, দুর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন মা দেবী দুর্গা। এবার ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয় এবং ১২ অক্টোবর মহাদশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। পৃথিবীতে এবছর দেবী দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায় চড়ে এবং তিনি কৈলাশে ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।
প্রতীমা শিল্পী কমল পাল, অভিজিৎ কুমার অমিত, শ্যামল পালসহ অন্যরা জানান, বৃষ্টি ও বন্যায় খড় ও মাটি পেতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। তার ওপর এবার মন্ডপে রেখেই প্রতীমা ও অন্যান্য দেবতার বিগ্রহ তৈরি করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে সময় পুষিয়ে নিতে ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে। রঙসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় মজুরি ভালো পাবো কিনা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
চাঁদপুর পূজা পরিষদের নেতা গৌতম বর্ধন জানান, দেবী দুর্গার অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে প্রধান অস্ত্র ত্রীশূল। আর বাহন সিংহ। তাই দেবীর আগমনিতে প্রত্যেক সনাতনীর মনেই উৎসবের আমেজ। আর এই দুর্গোৎসবকে ঘিরে মার্কেটগুলোতেও জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটায় মেতে উঠেছেন সনাতনীরা। তবে সারা বছর পূজোর এই সময়টুকুতে মহা আনন্দের জন্য অপেক্ষায় থাকে সনাতনীগন।
চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ জানান, সুন্দর ও যথাযথ সনাতন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শারদীয় দুর্গোৎসব করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে চাঁদপুরে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সাথেও সমন্বয় রেখেছি। আশা করছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জেলা হিসেবে আগের মত এবছর এখানে ভালোভাবেই পূজো করা সম্ভব হবে।
চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাড. বিনয় ভূষণ মজুমদার জানান, প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের যুবকরা ও ছাত্রছাত্রীরাও এবার পূজোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে থাকবে। আশা করছি যেকোন শঙ্কা উপেক্ষা করে ভালোভাবেই আমরা পূজো শুরু থেকে শেষ করতে পারবো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কর্মকর্তাগন।
পূজোর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শঙ্কিত হবার কারণ নেই। ইতোমধ্যেই সনাতন ধর্মালম্বী নেতৃবৃন্দসহ সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে ২২২টি পূজামন্ডপকে ঘিরে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে প্রস্তুতি ও সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। আশা করছি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভালোভাবেই এই শারদীয়া দুর্গোৎসব উদযাপন করতে পারবে।
পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রাকিব জানান, চাঁদপুরে ২২২টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন হবে। আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা পূজাকে নির্বিঘ্নে পালনের জন্য তাদের সাথে রয়েছি। নিরাপত্তার কোন ধরনের ঘাটতি নেই। পূজা ঘিরে কোন ধরনের খারাপ আশংকা নেই বলে জানান তিনি।
০৮ অক্টোবর, ২০২৪।