স্টাফ রিপোর্টার
গত শুক্রবার দুপুর থেকে চাঁদপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র প্রভাব দেখা দেয়। শুরু হয় থেমে থেমে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি। পরদিন শনিবার হালকা ও ভারি বৃষ্টি হয়। রোববার ভোর থেকে টানা ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। বিকাল ৩টার পরে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের সবকিছু লণ্ড-ভণ্ড করে দেয়।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, হাজীগঞ্জ ও মতলব উত্তর উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর ও দুই হাজার গাছ ভেঙ্গে উপড়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের ঘরগুলোর টিন ও বেড়া বাতাসে উড়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। ৪ উপজেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৭শ’ ৩৫ জন। গত শুক্রবার দুপুর থেকে রোববার বিকেল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এই তান্ডব চালায়।
এদিকে শহরের পুরান বাজারের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় বেশ কয়েকটি বড় গাছ উপড়ে পড়ে গেছে। শহরের গুয়াখোলা রোডে গাছের ডাল ভেঙে বিদ্যুৎ তারের উপরে পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ তার ছিঁড়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া গত শুক্রবার রাত ১০টা থেকে চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে সব যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডাবি¬উটিএ কর্তৃপক্ষ। পরে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে গতকাল সোমবার ভোর ৬টা থেকে সিডিউল অনুযায়ী চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ চলাচল শুরু হবে।
গতকাল সোমবার সকালে চাঁদপুর শহরসহ জেলার ৪ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্তের তালিকাটি নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা। ৪ উপজেলার দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নসমূহ হলঃ- চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, হানারচর, ইব্রাহিমপুর, চান্দ্রা ইউনিয়ন। হাইমচর উপজেলার গাজীপুর, আলগী উত্তর ও দক্ষিণ, নীলকমল, হাইমচর, চরভৈরবী ইউনিয়ন। মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, ফরাজিকান্দি ও ফতেহপুর ইউনিয়ন। হাজীগঞ্জ উপজেলার হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও দ্বাদশ গ্রাম ইউনিয়ন। এদের মধ্যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলো হলো গাজীপুর, নীলকমল, হাইমচর, হাজীগঞ্জ পৌরসভা ও দ্বাদশ গ্রাম এবং রাজরাজেশ্বর।
সরেজমিনে গতকাল সোমবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বলিয়ার চরে গেলে শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় নুরুল ইসলাম দেওয়ান, আমিনা বেগম, আইনল হক মোল্লা, আমিনুল ইসলাম, শহিনা বেগম জানায়, আমরা জাহাজমারা এলাকার দেওয়ান কান্দি এলাকা নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ার পর এখানে এসে বাড়ি করেছি। বুলবুলের তান্ডবে এই এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়ি-ঘর তছতছ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা কেবিএম জাকির জানান, চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা পেয়েছি। জেলায় বিধস্ত মোট বাড়ির সংখ্যা প্রায় ৪শ’ ৮৩টি। এর মধ্যে আংশিক ৩শ’ ৮৮টি ও সম্পূর্ণ ৯৫টি পেয়েছি। আর দুর্গত মানুষের সংখ্যা ১২ হাজার ৭শ’ ৩৫ জন। মৃত ও নিখোঁজ নেই।
তিনি আরো জানান, সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে দুর্যোগ পরিস্থিতির মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খানের তদারকি ছিল প্রশংসনীয়। ঐ দিন তিনি সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুর্যোগ পরিস্থিতি মনিটরিং করেন জেলা প্রশাসক। ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাচ্ছি। তাৎক্ষণিক কিছু ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও সহায়তা করা হবে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তা হিসেবে জেলার ৪ উপজেলায় সর্বমোট ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং নগদ অর্থ সহায়তা হিসাবে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
রাজরাজেশ^র ইউপির চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী বলেন, গতকাল সোমবার ভোরে আমি ক্ষতিগ্রস্ত চরগুলো পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কিছুদিন আগে পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে এইসব চরে অবস্থান নিয়েছে। এখন আবার ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে তাদের ঘরবাড়িগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি আমি প্রশাসনকে জানিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা শতাধিক।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম বলেন, প্রচণ্ড বাতাসে হাইমচরের ছয়টি ইউপির মধ্যে হাওলাদার কান্দিতে ৩৮টিসহ চরাঞ্চলের ঈশানবালা, মনিরপুরচর, গাজীপুর, নীলকমল, মাঝির বাজার, সাহেবগঞ্জ, চরকোড়ালিয়া, মাঝেরচর ও নতুন চরে প্রায় ৪ শতাধিক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সড়কে বহু গাছ ভেঙে পড়ে। এসব গাছ তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের সহযোগিতায় চাঁদপুর ও হাইমচর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা কেটে অপসারণ করেছেন।
চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস.এম ইকবাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পড়ে বহু গাছপালা বিদ্যুতের তারের উপর পড়েছে। এসব গাছ কেটে অপসারণ করে লাইন সচল করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় গ্রিডে মেরামতের কাজের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছিলো।
জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রমহান খান বলেন, চাঁদপুর সদর, হাইমচর, হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়েছি। স্ব-স্ব উপজেলার ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের সরেজমিন দেখে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
- Home
- চাঁদপুর
- চাঁদপুর সদর
- চাঁদপুরে ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত