বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে
…………বেগম অঞ্জনা খান মজলিশ
শাহ আলম খান
চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা রোববার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন নবাগত জেলা প্রশাসক বেগম অঞ্জনা খান মজলিশ। বিগত মাসের কার্যবিবরণী পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেন।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুরকে সু-শৃংখল ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে জেলা প্রশাসন সবসময় কাজ করে যাবে। চাঁদপুর একটি শান্তিপ্রিয় এলাকা। তাই সব সরকারি দপ্তরের দায়িত্বশীলরা এক হয়ে কাজ করবেন। যেন বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি।
উপস্থিত জেলা কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের আলোকে তিনি বলেন, নদী রক্ষায় জলদস্যুদের আইনের আওতায় আনাসহ মৎস্য সম্পদ, চোরাচালানী, মাদকদ্রব্য ও কালোবাজারীসহ সব ধরনের অপরাধ নির্মূলে একযোগে সব প্রতিষ্ঠান কাজ করবেন।
সভায় পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলার আইন-শৃঙ্খলা জবাবদিহিতা পুলিশকে দিতে হয়। আমাদের কাছে যে কোন অভিযোগ আসলে সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করি। সফরমালী এলাকার সাপ্তাহিক হাট নিয়ে যে অভিযোগ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থাপন করেছেন সেটা আমি তদন্ত করে দেখবো। কে বাজার বসিয়েছে, কে তাদের বসার অনুমতি দিয়েছে, সরকারের কোনো অনুমতি আছে কিনা সেটা খোঁজ-খবর নিবো।
তিনি আরো বলেন, হাজীগঞ্জ এলাকায় যানজট নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। আমি হাজীগঞ্জ থানার ওসিকে শোকজ করেছি। এখানে টিআই জাহাঙ্গীর আছে, তাকেও আমি শোকজ করেছি। কি কারণে যানজট বেড়ে গেছে, সে কারণ বের করার জন্য। কচুয়ার ওসিকে যানজট নিয়ে কাজ করা জন্য বলে দিয়েছি। তিনি বলেন, উঠতি বয়সের যুবকের কথা এসেছে, আমরা সে বিষয় কাজ করছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমে আমি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নবাগত জেলা প্রশাসক বেগম অঞ্জনা খান মজলিশকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের চাঁদপুরবাসী অনেক শান্তিপ্রিয়, সেটা আমরা আপনাকে বলতে পারি। চাঁদপুর শহরে আইন-শৃঙ্খলা মোটামুটি অনেক ভালো, সেটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে কথা বলেছেন আমারো সেই একই কথা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছেন, নৌ-পুলিশ সুপার আছেন- সবাই একসাথে কাজ করলে সব সমস্যা সমাধান হবে আমি মনে করি। বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি যে অভিযোগ রেখেছে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, কার্গো-ট্রলার-বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বেপারী যে অভিযোগ করেছেন সেটা ১০০% সত্য। জেলা আওয়ামী লীগ বালুর ব্যবসা করে না, নদীতে কোন কাজ করে না। জেলা আওয়ামী লীগ অন্যায় কোন কাজ করে না- সেটা আমরা আপনাকে বলতে পারি। এখানে নৌ-পুলিশ সুপার আছেন, জেলা পুলিশ সুপার আছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অন্যায় কাজের জন্য কখনো কারো কাছে সুপারিশ করে না, এমনকি কারো কাছে ফোন করেছে- কেউ বলতে পারবে না।
নৌ-পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, নৌ পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে আর আমাদের বিধিমালা ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার পর থেকে আমাদের কার্যক্রম এবং মামলা পরিচালনা করছে। আমি যোগদান করেছি ৪৫ দিন হলো। নদীতে অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে, জাঁক দিয়ে ব্যারিকেড করে রেখেছে, সেগুলো উচ্ছেদ করার কাজ শুরু করেছি, সেই ক্ষেত্রে নৌ-পুলিশের জিরো টলারেন্স। যদিও অনেক জায়গা থেকে আমাদের বাঁধা এসেছে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে, উপর মহল থেকে বলা হয়েছে আরো কিছুদিন রাখার জন্য, নৌ-পুলিশ সব বাঁধা অতিক্রম করে জাঁকগুলো উচ্ছেদ করে দিয়েছি। এখানে অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন, আগামিতে আমরা আপনাদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাবো আশা করি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
নৌ-পুলিশ সুপার আরো বলেন, বাংলাদেশ কার্গো-ট্রলার-বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি যে অভিযোগ করেছেন নদী পথে চাঁদাবাজি, মারধর ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। বালুমহল নিয়ন্ত্রণ করেন এমন কিছু ব্যক্তি আছে যারা অনেক প্রভাবশালী। আমি অনেকবার উনাকে বলেছি, আপনি থানায় জিডি করেন, মামলা করেন। উনি এটাতে রাজি হয়নি। উনি অনেক জায়গায় দরখাস্ত দিয়েছেন, ওই দরখাস্ত আমরা পেয়েছি। দরখাস্তে ডাকাত দলের সদস্যদের নাম লেখা রয়েছে। আমরা যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, জাঁকগুলো কে নিয়ন্ত্রণ করে, কার পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে- সেগুলো চিহ্নিত করা দরকার। কে করছে তা’ আমরা জানি না, আর কারো উপর দোষ চাপিয়ে দেয়াটা ঠিক হবে না। সে যে’ই হোক না কে তাকে কোনভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না।
সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, করোনা সংক্রমণ আগের চাইতে অনেক কমে গেছে। গতকাল ৫৭ টি করোনা টেস্ট করা হয়েছে, এরমধ্যে একটি পজেটিভ এসেছে। সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে চলাফেরা করলে অবশ্যই এই করোনা সংক্রামন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বেপারী বলেন, বাংলাদেশ অতি প্রয়োজনীয় দেশীয় প্রযুক্তির তৈরি বাল্কহেড কার্গো ট্রলার নৌযানগুলি উত্তরাঞ্চলের রাজবাড়ী, পাবনা ও সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চল হইতে বালি, পাথর, কয়লা বোঝাই করে শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলো অতিক্রম করে খুব সতর্কতার সাথে অত্যন্ত ভালোমানের বালি, পাথর সংগ্রহ ও বোঝাই করে বরিশাল, খুলনা, মোংলা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই মালামাল পরিবহন করে থাকে। নৌযানগুলো চাঁদপুর অঞ্চল অতিক্রমকালে নামধারী বালুমহল ইজারাদার পরিচয় দিয়ে নদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নৌকা, ট্রলারগুলো দিয়া জলদস্যুর ন্যয় বাল্কহেড কার্গো ট্রলারগুলোতে চড়াও হয়। তারা এবং শ্রমিকদের মারধর, ভয়-ভীতি ও চাপ সৃষ্টি করে ৫০০০/৭০০০ টাকা করে ছিনিয়ে নেয়। এতে চরম ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে শ্রমিকরা নৌযান চালাচ্ছে। এই চাঁদাবাজি অনিতবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি প্রয়োজন এবং বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিষয়টি অনুধাবন করে অতি জরুরি মনে করে চাঁদপুরের নদীতে যেমন এখলাসপুর, মোহনপুর, আমিরাবাদ, আলুর বাজার, হরিনারচর নৌ এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করানোর ব্যবস্থা করে শ্রমিকদের শান্তিপূর্ণভাবে নৌযান চালানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, নৌ পুলিশ সুপারসহ সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি বা আন্দোলন করলে আমাদের দায়ী করা যাবে না।
সভায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দীন, শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এম এ কুদ্দুস, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এএইচবিএম কবির আহমেদ, জেলা মৎস্য কর্মকতা আসাদুল বাকি, জেলা নির্বাচন অফিসার মো. তোফায়েল আহমদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আক্তার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহানাজ, কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ, মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা হক, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ, হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি বেগম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান মানিক, মো. ছামিউল ইসলাম, আজিজুন্নাহার শম্পা, ইমরান-মাহমুদ-ডালিমসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
১১ জানুয়ারি, ২০২১।