স্টাফ রিপোর্টার
ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে কলম যোদ্ধাদের একক প্লাটফর্ম ‘চাঁদপুর প্রেসক্লাব’-এর ৫০ বছরপূর্তির আনন্দে আজ মাতোয়ারা চাঁদপুরের সাংবাদিক সমাজ। ১৯৭০ সালের এমন এক হেমন্তদিনে চাঁদপুরের ক’জন প্রতিথযশা সাংবাদিকের হাত ধরে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পথচলা শুরু। ১৯৭০ থেকে ২০২০ অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করা চাঁদপুর প্রেসক্লাব আজ অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণমানুষের কাছে সমাদৃত। ৫০ বছর পূর্ণ হওয়া এ প্রতিষ্ঠানটি সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব আয়োজনে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে দিনব্যাপি নানান কর্মসূচি।
আগামি ৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় সংক্ষিপ্ত উদ্বোধন শেষে বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। এরপর সকাল ১০টায় শুরু হবে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতিবছরের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফ্যামিলি ডে, দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংবাদিক সমাবেশ, দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোচনা পর্ব। সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রধান অতিথি থাকবেন চাঁদপুর মাটি ও মানুষের নেত্রী, উন্নয়নের রূপকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং আমন্ত্রিত বেশক’জন অতিথি।
এরপর বিকেল ৪টায় একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সংবর্ধনা ও সম্মাননা পর্ব। বিকেল ৫টায় একই মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০২১ সালের নবগঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠান। এ পর্বেও প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ বছর পূর্তি) অনুষ্ঠানের জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেবেন আমন্ত্রিত শিল্পীসহ স্থানীয় শিল্পীরা। রাত সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে র্যাফেল ড্র। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হবে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফ্যামিলি নাইট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটবে।
উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে তৎকালীন কুমিল্লা জেলার জেলা প্রশাসক কাজী আজহার আলীর চেষ্টায় চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডস্থ পরিত্যক্ত ‘মাধব ভবন’ (বর্তমান জেলা শিল্পকলা একাডেমি)-এর একটি কক্ষে মরহুম আ. খালেক চৌধুরী ও মরহুম কামরুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে চাঁদপুর প্রেসক্লাব নামক সাংবাদিকদের একটি প্লাটফর্ম গঠন করা হয়। পরবর্তীতে এর সাথে সম্পৃক্ত হন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন খান, শংকর চন্দ্র দে, আহসানুজ্জামান ও চাঁদপুর কলেজের তৎকালীন অধ্যাপক এসএম ওবায়েদ উল্লাহ।
১৯৭৪ সালের শেষ ভাগে চাঁদপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান সর্বজন শ্রদ্ধেয় মরহুম আ. করিম পাটোয়ারী চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের জন্য পৌরসভার (ডোবা সম্বলিত) একটি জমি বরাদ্দ প্রদান করেন। ওই ডোবা বা জমিটি চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা ভরাট করে ১৯৭৫ সালে চাঁদপুরের তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এএইচএম ফজলুল হক ভবন নির্মাণে সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। বলাবাহুল্য, ১৯৭৬ সালে তৎকালীন চাঁদপুর কলেজ মাঠে একটি বিশাল মেলার আয়োজন করে তার থেকে উপার্জিত অর্থে সিংহভাগ চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২২ ডিসেম্বর বর্তমান চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনের স্থানে সুদৃশ্য টিনসেড ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োজিত উপদেষ্টা আকবর কবির। সে থেকে চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবনটি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের জন্য একটি নিজস্ব প্লাটফর্ম হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। চাঁদপুর মহকুমা থেকে জেলা রূপান্তরের পর এ পর্যন্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী, এমপি ও জনপ্রতিনিধিরা চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবন পরিদর্শন ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর প্রেসক্লাবে বর্তমানে প্রায় শতাধিক পেশাদার সাংবাদিক সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া আজীবন সদস্য হিসেবে চাঁদপুরের বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ জড়িয়ে আছেন। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই এখনো প্রেসক্লাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০০৩ সালে গঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার ও সাধারণ সম্পাদক ইকরাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আগের টিনসেড ভবনটি ভেঙে ৪র্থতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। যদিও সেসময় স্বল্প অর্থ ব্যয় করে ভবন ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু হয়ে থমকে যায়। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর সফরে এসে আউটার স্টেডিয়ামে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেয়ার সময় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের প্রসঙ্গক্রমে উন্নয়নের কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে অবস্থানকারী চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভবন নির্মাণের বিষয়টি তাৎক্ষণিক বলামাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ভবন নির্মাণ করে দিবেন বলে ওই জনসভায় ঘোষণা দেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভবন নির্মাণের জন্য চাঁদপুর জেলা পরিষদের মাধ্যমে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন। সেই অর্থের মাধ্যমেই চাঁদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বর্তমান চাঁদপুর প্রেসক্লাবের তৃতীয়তলা ভবন নির্মিত হয়েছে। চাঁদপুর প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ তথা চাঁদপুরের সাংবাদিক সমাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে আজন্ম কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে থাকবেন।
২০২০ সালের নভেম্বর মাসে চাঁদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ৪র্থ তলা সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজটি চলমান রয়েছে।
২৯ ডিসেম্বর, ২০২০।