স্টাফ রিপোর্টার
৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চাঁদপুর সদর মডেল থানায় দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয় ব্যবহার করে থানায় তদবির, মামলা ও দরবারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫ আগস্টের স্বৈরাচার পতনের পর চাঁদপুর মডেল থানায় দলীয় পরিচয়ে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত থাকে তাদের আনাগোনা। আসামি ছাড়ানো, আসামি হাজতে ঢুকানো, মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মানুষকে হয়রানী করে থানায় দরবার বসিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়, মাদক উদ্ধারের নামে পুলিশের সাথে থেকে অভিযান করে মাদক দিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁসানো- দালাল চক্রের নিত্যদিনের ঘটনা। এছাড়া পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলের বড় নেতার পরিচয় দিয়ে এসব দালালরা হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের প্রায়ই চাঁদপুর মডেল থানার বিভিন্ন রুমে ও বিভিন্ন দারোগাদের সাথে খোশগল্পে মত্ত থাকতে দেখা যায়। পুলিশ প্রশাসন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে কথিত এসব রাজনৈতিক পরিচয়ধারী দালালদের দৌরাত্ম্যের ব্যাপারে কিছু বলতে পারছে না।
থানার পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা জানান, সাংবাদিক নামধারী এক ইউটিউবার সদর হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা ও থানার কিছু পুলিশের সাথে সখ্যতা রেখে পুলিশের সাথে বিভিন্ন অভিযানে যায় বা কিছু পুলিশ তাদের অভিযান বা তদন্তের ভিডিও ঐ ইউটিউবারকে সরবরাহ করে। সে ঐসব ভিডিও তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে বিভিন্ন মানুষকে বিভ্রান্ত বা হয়রানী করে।
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগঃ- নিরীহ মানুষদের অভিযোগ, মামলা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে থানায় গেলে কিছু চক্র তাদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করছে। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মামলা জটিল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হলে আমি থানায় সাহায্য চাইতে গিয়েছিলাম। সেখানে (—মোল্লা) নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের লোক পরিচয় দিয়ে বলল, টাকা দিলে ব্যবস্থা করে দেবে, না হলে উল্টো বিপদে পড়ব।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নঃ- এ বিষয়ে থানার এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় দালালদের কোনো স্থান নেই। কেউ যদি অনৈতিক কিছু করে, প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যের আশ্রয়ে এসব দালালরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরিঃ- জনসাধারণের দাবি, থানায় দালালদের প্রভাব কমাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে সাধারণ মানুষ হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, থানায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কোন কাজ নেই। যদি কেউ বিএনপির পরিচয়ে কোন তদবির, দরবার বা সুপারিশ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বাহার মিয়ার সরকারি মোবাইল নম্বরে বার-বার ফোন করা হলেও তার ফোন ওয়েটিংয়ে পাওয়া যায়। ফলে তার সাথে কথা বলা যায়নি।
১০ মার্চ, ২০২৫।