চাঁদপুর রুটের ৬টি রকেট ও স্টিমারের মধ্যে ৪টি নষ্ট


শওকত আলী
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)’র পিএস মাহ্সুদ বিকল হয়ে চাঁদপুর স্টিমার ঘাটে ১ মাস ৫ দিন যাবত পড়ে রয়েছে। পিএস টার্ন চাঁদপুরে মেরামত না হওয়ায় নারায়নগঞ্জে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে করে এ রুটে প্রতিদিন যাতায়াতকারী শত-শত সাধারণ যাত্রীরা রকেট ও স্টিমার সার্ভিস না থাকায় মারাত্মক দুর্ভোগ পৌহাচ্ছে। বিগত বছর ঢাকা-চাঁদপুর-খুলনার ও খুলনা-চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে চলাচলের জন্য নিয়মিত বিআইডব্লিউটিসি’র রকেট ও স্টিমার সার্ভিস ছিল।
কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিগত দিনে সপ্তাহে ৭ দিনই চাঁদপুর থেকে খুলনা ও ঢাকা থেকে চাঁদপুর-খুলনার মধ্যে হাজার-হাজার যাত্রী যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন করা হতো। এতে সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পেতো। আর যাত্রীরাও নিরাপদে যাতায়তের নিশ্চয়তা পেয়ে থাকতো। ৬টির মধ্যে কয়েক বছর আগে ২টি স্টিমার পুরো বিকল হয়ে যায়। যার ফলে এ রুটে ৪টি রকেট বা স্টিমার চলাচল করায় সপ্তাহে ৫ দিন এ রুটের যাত্রীরা নিরাপদে যাতায়াত করতো।
জানা যায়, বর্তমানে ২টি রকেট বা স্টিমার সার্ভিস পুনরায় চাঁদপুর রকেট ঘাটে বিকল হয়ে পড়ে থাকায় এ রুটের যাত্রীরা তাদের সে সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে এ রুটে সপ্তাহে ৩ দিন রকেট ও স্টিমার সার্ভিস চলাচল করায় এ রুটের যাত্রীরা সঠিকভাবে তাদের যাত্রী সেবা পাচ্ছে না বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন।
পিএস টার্ন’র প্রকৌশল বিভাগের মাস্টার অফিসার আ. মান্নানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি টীম ঘটনাস্থলে এসে যান্ত্রিক ত্রুটি, পাখার বাঁকা হওয়া ৪টি পাতা ও ওয়েন্ডার মেরামতের কাজ করেও জাহাজটি সচল করতে পারেনি। পিএস মাহ্সুদের রাবার ডিস্ক লায়নারের মেরামতের কাজ ঢাকার ওয়ার্কশপে চলছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ৭ আগস্ট পিএস মাহ্সুদ চাঁদপুর মোহনায় বিকল হওয়ার পরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে পিএস মধুমতি রকেট চাঁদপুরে এনে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু ৩১ আগস্ট পিএস টার্ন বিকল হওয়ার পর ১৪৬ জন যাত্রীকে গন্তব্যে পাঠানোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ১ সেপ্টেম্বর স্টিমারে থাকা যাত্রীদের মধ্যে চাঁদপুরের ঘাট থেকে টিকিট ক্রয় করা ১শ’ ১৩জন যাত্রীকে টিকিট বাবদ ২৩ হাজার ৫শ’ ৪০ টাকা ফেরৎ দেয়া হয়। ঢাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণির দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের মধ্যে ৩৩ জনের টিকিটের টাকা ফেরৎ না দিয়ে ঢাকা সদরঘাট কাউন্টার থেকে টাকা ফেরৎ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
গতকাল বুধবার বিআইডব্লিউটিসি’র চাঁদপুর ঘাটের সহকারী ম্যানেজার মো. মনির হোসেন জানান, গত ৭ আগস্ট ৪ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে পিএস মাহ্সুদ চাঁদপুর ঘাটে এসে বিকল হয়। এরপরে ওই যাত্রীদের পিএস মধুমতির মাধ্যমে গন্তব্যে পৌঁছানো হয়। ৩১ আগস্ট পিএস টার্ন মেঘনা মোহনায় এসে প্রচন্ড স্রােতের কবলে পড়ে পাখার ৪টি পাতা বাঁকা হয়ে যায় এবং ওয়েন্ডারে সমস্যা দেখা দেয়। পরবর্তীতে চাঁদপুরে যাত্রী নামিয়ে পুনঃরায় রওয়ানা হওয়ার জন্য রকেটটি চালু করা হলে পাতাগুলো বিপরীত দিকে ঘুরতে থাকে এবং রকেটের ইঞ্জিন বিকট শব্দ হলে বন্ধ করে দেয়া হয়। ওইদিন যাত্রী কম হওয়ায় পিএস টার্নের যাত্রীদের গন্তব্যে যাওয়ার ব্যবস্থা করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরো বলেন, সহসাই পিএস টার্ন মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হলে এ রুটে চলাচল করবে। ঢাকা থেকে পুনঃরায় রকেটটি সার্ভিস সংযোগকরণ করা হবে। পিএস মাহ্সুদ’র রাবার ডিস্ক লারনারের কাজ সম্পন্ন হয়ে সচল হলে সেটিও ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, উল্লেখিত দু’টি রকেট যান্ত্রিক ত্রুটির পর থেকে এই রূটে পিএস বাঙালি ও মধুমতির মাধ্যমে যাত্রীদের চলাচল সচল রাখা হয়েছে। এই রুটে এখন সপ্তাহে ৩ দিন সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবার চলাচল করছে। এ রুটির অতি গুরুত্ব রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক যাত্রী চলাচল করছে। বিশেষ সময় যাত্রী বেড়ে ৬ থেকে ৭শ’ যাত্রীও হয়ে থাকে।

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯।