চাঁদপুর সদর হাসপাতালের ১০৪নং কক্ষে রোগী আছে, ডাক্তার নেই

ডা. শাহাদাৎ হোসেনের খামখেয়ালিপনা

  1. স্টাফ রিপোর্টার
    ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের কাছে সেবা সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। এরপরও ভাল সেবা পাওয়ার আশায় হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভীড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। টিকিট কাটতে হিমসিম খাচ্ছে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। কোন রকমে টিকিট কেটে যদি কাক্সিক্ষত ডাক্তারকে রুমে না পান তাহলে ভোগান্তির আর শেষ থাকে না।
    এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকদের খামখেয়ালীপনা। তারা তাদের ইচ্ছেমতো আসেন আর যান। ইচ্ছে হলে রোগী দেখেন, নাহলে বিভিন্ন অজুহাতে চলে যান। এছাড়া রয়েছে তাদের দুর্ব্যবহার। তারা রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে চরম অসৌজন্য আচরণ করেন। তবে ঐসব ডাক্তারদের সংখ্যা কম হলেও ২/৪ জনের জন্য ঐ হাসপাতালে রোগীরা গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন। এর ফলে যেকোন সময় রোগীদের সাথে ঐসব চিকিৎসকদের হেস্তনেস্ত হওয়া সময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন অনেকে।
    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার ও বুধবার বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর হাসপাতালের জুনিয়র কলসালটেন্ট (অর্থোপেডিক্স) ডা. শাহাদাৎ হোসেন হাসপাতালেই আসেননি। ফলে তার ১০৪নং কক্ষ পড়ে থাকে ফাঁকা। রোগীদের ভিড় শুধু বাড়তেই থাকে। শুধু তাই নয়, তিনি রোগীদের সাথে প্রতিনিয়ত খারাপ ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
    কাগজ-কলমে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডাক্তারদের হাসপাতালে উপস্থিত থেকে রোগীদের সেবা দেওয়ার কথা থাকলে ডা. শাহাদাৎ হোসেন তার কক্ষে আসেন ইচ্ছেমতো। তিনি কখনো ১২টার আগে তার কক্ষে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার দুপুর ১টার মধ্যে সেখান থেকে চলে যান। আর হাসপাতালে বসেই তিনি টাকা নিয়ে রোগী দেখেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
    সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার পৌনে ১২টায় হাসপাতালের নিচতলায় দেখা গেছে ১০৪ নং কক্ষের সামনে রোগীদের ভিড়। কিন্তু নির্দিষ্ট চেম্বারে নেই ডাক্তার শাহাদাৎ হোসেন। ডাক্তারের কক্ষের প্রথম দরজা খোলা। ভিতরে রোগীদের ভিড়। ডা. শাহাদাৎ হোসেনের কক্ষের দরজা বন্ধ। সামনের কক্ষে থাকা ডাক্তারের সহকারী আনোয়ারকে ডাক্তার কখন আসবে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, স্যার আসতে অনেক দেরী হবে।
    সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী বলছে, আমরা অনেক দূর থেকে হাসপাতালে এসেছি। এসে ডাক্তারের দেখা পাচ্ছি না। এ নৈরাজ্য থেকে কবে মুক্তি পাবে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা দরিদ্র মানুষগুলো। এমনটাই প্রশ্ন স্থানীয় সচেতন মহলের।
    ডা. শাহাদাৎ হোসেনের কক্ষের বাইরে চেয়ারে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ বাম পা প্লাস্টার নিয়ে বসে আছেন। সাথে তার স্ত্রী ও তার মেয়ে। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার নাম দেলোয়ার হোসেন। তিনি শাহরাস্তি উপজেলা থেকে মঙ্গলবার ভোরে ডা. শাহাদাৎ হোসেনের কাছে সেবা নেয়ার জন্য এসেছেন। বেলা ১২টা বেজে গেলেও ডাক্তার আসেননি।
    বৃদ্ধ দেলোয়ার হোসেন আরো জানান, আমি ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার অনেক সুনাম শুনেছে। কিন্তু পা ভেঙ্গে বিপদে পরে ডাক্তারের কাছে এসে দেখলাম উল্টো। এখানে ডাক্তাররা তাদের মতমতো আসেন।
    এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনোয়ারুল আজিম রোগীদের সাথে ডা. শাহাদাৎ হোসেনের অশোভন আচরণের বিষয়ে বলেন, রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করার কোন সুযোগ নেই। হাসপাতালে অনেক ডাক্তার, সবার পেছনে ঘুরে তো তত্ত্বাবধায়ন করা সম্ভব না। রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করলে ডাক্তার তার জবাব দিবে।
    উল্লেখ্য, ১৯৩৯ সালে ১০ শয্যা নিয়ে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালটি কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় এর নামকরণ করা হয়েছিল এলগিন হাসপাতাল। ১ জন মেডিকেল অফিসারের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে এলগিন হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিদ্যমান হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে আরো উন্নতমানের সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। সেই লক্ষ্যে ২০০২ সালে সদর হাসপাতালের উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। কাজ সমাপ্তির পর ২০০৫ সালে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালে ২৫০ শয্যা হিসাবে পদ সৃষ্টি ও ডিক্লারেশন পায়। ২০১৩ সালে ২৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন পায় এই হাসপাতালে।