চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা ব্র্যান্ডিং ও ই-সার্ভিস বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভা গতকাল শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআইয়ের ই-সার্ভিস পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) ড. মোঃ আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় তথ্য বাতায়নে এ জেলার সকল দপ্তরের হালনাগাদ তথ্য থাকতে হবে। তিনি চাঁদপুর জেলার তথ্য বাতায়ন নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য বাতায়নে সঠিক তথ্য নেই। আর যা-ই রয়েছে তাতে আছে কিছু বানান ভুল। এমন যদি হয় তাহলে মানুষ আমাদের কাছ থেকে কী তথ্য নিবে। আমি আশা করছি, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য বাতায়নে সঠিক, শুদ্ধ ও হালনাগাদ তথ্য দেয়া হবে। তিনি বলেন, শুধু তাই নয়, যে সকল লেখা থাকবে সেগুলো পড়ে যেনো অন্যরা পর্যটক হিসেবে এ জেলায় আসতে উৎসাহিত হয় সেভাবে তা লিখতে হবে। তিনি চাঁদপুরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, বর্তমান সরকার জনপ্রশাসনকে জনগণের সেবায় এবং দেশের উন্নয়নে আরো বেশি বেশি কাজ করার জন্যে উৎসাহ প্রদানে জনপ্রশাসন পদক দেয়া শুরু করেছে। এই জনপ্রশাসন পদক এ জেলা সর্বোচ্চ পেয়েছে। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন পুরস্কার পেয়ে চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে পথিকৃৎ হয়েছে। তাই এখন বসে থাকলে চলবে না। যারা পথিকৃৎ তাদের পথ ধরেই অন্যরা হাঁটে। তাই এর সুনাম ধরে রাখার দায়িত্ব শুধু জেলা প্রশাসনেরই নয়, এ জেলাবাসীরও রয়েছে। তিনি সুধীজনদের মা-ইলিশ সংরক্ষণের মেয়াদ একমাস করার বিষয়ে বলেন, আলোচনা সাপেক্ষে ইলিশ-শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলা-ব্র্যান্ডিং নিয়ে সর্বপ্রথম গত বছরের (২০১৬) ২৮ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরে সভা করে সরকার কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অন্য ৬৩টি জেলায় জেলা-ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ শুরু করে। এদিক থেকে চাঁদপুর জেলা রোলমডেল। এ সুনাম ধরে রাখতে হলে চাঁদপুরের গণমাধ্যমেরও ভূমিকা থাকতে হবে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এটা আপনাদের জেলা। এ জেলার সুনাম অক্ষুণ্ন থাকলে এটা আপনাদেরই গর্ব। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে জেলা ব্র্যান্ডিং ও ই-সেবা বিষয়ক তথ্য উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই, ই-সার্ভিসের উপ-সচিব মোঃ মামুনুর রশিদ ভঁূইয়া।
সভায় বক্তারা জেলা ব্র্যান্ডিং নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব করেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, আমরা চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে ইলিশের পাশাপাশি ইলিশ বাজার আধুনিকায়ন ও বড়স্টেশন মোলহেডকে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্যে প্রস্তাব করেছি। কিন্তু জেলা শহরের বাইরে থেকে এবং অন্য জেলা থেকে আগত লোকজনকে ইলিশ বাজার ও মোলহেডে যাওয়ার পথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল দশা। ফলে শহরে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়াও সরকারি হাসপাতালে সেবা নেই। সকল ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে মানুষ এক সময় বলে উঠবে, কিসের ব্র্যান্ডিং জেলা?
জেলা প্রশাসক জানান, চাঁদপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন প্রবেশ মুখে ৩টি গেইট করা হবে। সেই গেইটে জেলা ব্র্যান্ডিং লগো থাকবে। এছাড়াও সড়ক উন্নয়নসহ কিছু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় পূর্বের বছরের চেয়ে এ বছর আমাদের অভিযান সফল হয়েছে-এমনটি বলা যাবে না। তারপরও আমরা প্রায় সফল। মা ইলিশ প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। ইলিশ ডিম ছেড়ে উজান পাড়ি দিয়ে ভারতের আসামেও চলে গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌ-পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ডাঃ মোঃ একিউ রুহুল আমিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডঃ মোঃ জহিরুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন, সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী, চাঁদপুর সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী আধ্যাপক মোঃ গোলাম মোস্তফা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান, জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কবির উদ্দিন, দৈনিক মতলবের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কেএম মাসুদ, জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন রাসেল প্রমুখ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মাসুদ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আয়েশা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) মোহাম্মদ শওকত ওসমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মঈনুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, জেলা তথ্য অফিসার মোহাম্মদ নূরুল হক, জেলা স্কাউটসের কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট কাজী সুমন, বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।