তারা কি দেশ ও জনগণের বন্ধু?

মো. মিজানুর রহমান

২০০৮ সালে যখন সারা বিশ্বের অর্থনীতি টালমাটাল তখন পৃথিবীর অল্পকিছু দেশ পরিস্থিতি সুন্দরভাবে মোকাবিলা করেছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত কতোটা মজবুত তা সেদিন বিশ্বনেতারা বুঝেছিল। আমরা প্রতিবেশী সব দেশের চেয়ে ভালোভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশেরই কিছুসংখ্যক মানুষ ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে’ বলে ধূ¤্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা কিছু না বুঝেই বা কোন বিশ্লেষণে এসব বলছে তা বোধগম্য নয়।
এদিকে অর্থনৈতিক বিশ্ব মন্দাকালীন সময়ে (২০০৮ সালে) প্রবৃদ্ধি ছিল- বাংলাদেশ ৬%, ভারত ৩.১% ও পাকিস্তান ১.৭%। করোনাকালীন সময়ে (২০২০ সালে) বাংলাদেশ ২.৪%, পাকিস্তান ০.৫% ও ভারত -৮%। শুধু এই তথ্যের ভিত্তিতেও কি ঐসব মুর্খদের মুখ বন্ধ করা যায় না?
বিশ্বব্যাংকের মতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে। আর শিক্ষিত মুর্খ পাপীরা বলে দেশ শ্রীলংকা হবে। এরা সব নিজ স্বার্থ চায় দেশ ডুবিয়ে। নিন্দা করি এদের।
অপরদিকে অর্থনীতির শুধুমাত্র ১টি তথ্য দিচ্ছি। ২০২০ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩.১৭ বিলিয়ন ডলার আর শ্রীলঙ্কার ২.৬৬ বিলিয়ন। এছাড়া বাংলাদেশে দেনা বা ঋণ ৪৮.০০ বিলিয়ন আর শ্রীলঙ্কার ৩৬.২৫ বিলিয়ন।
এছাড়া রয়েছে আমাদের প্রবাসী আয়। মাত্র ১৯ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১১ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে আবার ৪২ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছুঁয়েছে আমাদের রিজার্ভ। বর্তমান আমদানি ব্যয় অনুযায়ী এই টাকায় আরও ৬ মাসের আমদানির ব্যয় মেটানো সম্ভব। সাধারণত ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা থাকলেই সে দেশের রিজার্ভ নিরাপদ বলে গণ্য করা হয়। আগামি জুলাইয়ে ঈদ-উল আজহা। প্রবাসীরা দেশে কোরবানি দেয়ার জন্য অনেক টাকা পাঠাবেন। সেটা স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বেশি। তাই আগামি কিছুদিন রিজার্ভ আরও বাড়বে এটা অনেকটা নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়।
বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে না- মূলতঃ দু’টি কারণ রয়েছে।
এক. শ্রীলঙ্কার অনেক সমস্যার সাথে তারা ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার জিরো কোটায় নামিয়ে এনেছিল। ফলে উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এই ঘাটতি মেটাতে হতো আমদানি করে। কিন্তু তাদের কাছে আমদানি করার মত ব্যাপক পরিমাণ অর্থ ছিল না।
দুই. আমাদের যেমন প্রবাসীরা আছেন, তারা রেমিট্যান্স পাঠান। ফলে করোনার সময়ও আমাদের রিজার্ভ সঙ্কটে পড়েনি। শ্রীলঙ্কার এক্ষেত্রে আয় ছিল পর্যটন নির্ভর। করোনার কারণে পর্যটন আয় জিরো হয়ে যাওয়ায় তাদের রিজার্ভে ধস নামে।
এই দুটো বিষয় সামাল দেয়ার জন্য তাদের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। বিশ্বের প্রথম রাসায়নিক মুক্ত দেশ হতে গিয়ে দেশটার অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এটা তারা সময়মত ভাবেনি। বাংলাদেশে এসব কারণ মোটেই নেই।
সমগ্র এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সেরা সরকার প্রধান হিসাবে সারা বিশ্ব যাকে স্বীকৃতি দেয় তিনি হচ্ছেন স্বাধীনতার জনক, জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসুরী, বাংলাদেশের খেটে খাওয়া গরিব-দুখীর নয়নের মনি, আমাদের অহংকার, আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলাদেশ এগোতে থাকবে। স্বপ্ন দেখা ভাল কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জাতির অমঙ্গল কামনা করা ক্ষমার অযোগ্য।
‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক বাংলাদেশের।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’
-সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মতলব উত্তর উপজেলা এবং সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ইলশেপাড়।

২৫ মে, ২০২২।