ইল্শেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরসহ সারাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ও জনমনে স্বাস্তি ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ চায়। গত ৫ আগস্ট দেশে ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের টানা শাসনের অবসান ঘটে এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সাহসী ভূমিকা ও পদক্ষেপ দেশকে একটি রক্তক্ষয়ী অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। পরবর্তী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মোহাম্মদ ইউনুছ সরকার।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালীন সময়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ছাত্রজনতার পক্ষ নিয়ে দেশকে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেছেন বলে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক মহলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এরপর থেকে নানা কাজে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় মানুষ কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করলেও সর্বসাধারণ প্রতিমুহূর্তেই আতঙ্কে থাকছে- কি জানি হচ্ছে? কারণ, বাংলাদেশ পুলিশ এখনো পুরোমাত্রায় কাজ করতে পারছে না। পুলিশ বাহিনীতে নানা সংকট এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি বলে জানা গেছে। যার কারণে সেনাবাহিনীর কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি।
দেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করলেও দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বত্রই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে সাধারণ মানুষ। সেনাবাহিনী দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে বলে মনে করছে সর্বসাধারণ। যদিও গত ১৭ সেপ্টেম্বর সরকার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারাদেশে সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ২ মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা দেয়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে।
তবে সেনাবাহিনী মাঠ পর্যায়ে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করার দেশের সর্বত্র মহল বিশেষের চাঁদাবাজিসহ আইন হাতে তুলে নেয়ার মত ঘটনা ঘটছে। এতে সর্বসাধারণের মনে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, শংকা কাটছে না। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের আলোকে দেশে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সেনাবাহিনী সরাসরি অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারবেন বলে বলা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধির বিভিন্ন ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন। ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতাও থাকবে। বেআইনী সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দানের ক্ষমতা, ছত্রভঙ্গ করতে সামরিক-বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতাও রয়েছে।
আর এ কারণে ১/১১ সময়ের ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সরকারের সময়কালীন সময়ের মতো তৃণমূল পর্যায়েও দ্রুত সেনা অভিযান প্রয়োজন বলে অভিমত সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে চাঁদাবাজিসহ দখল বাণিজ্যরোধে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষ বলছে, বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকেই চালকের আসনে থাকলে সবাই তাদের সহযোগিতা করবে। তাহলেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে।
যদিও জেলা পর্যায়ে সারা দেশেই দায়িত্ব পালন করে আসছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের অভিযান কম থাকায় উদ্বেগ বাড়ছেই। যদিও প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী উল্লিখিত ক্ষমতা ছাড়াও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং সেই সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের স্বীকারোক্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী অপরাধীকে সাজা দিতে পারবেন। তবে কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে তা দুই বছরের বেশি হবে না। এমন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন চান সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষে এখন দেশপ্রেমিক সেনাবহিনীই কেবল পারে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে। আর সেনাবাহিনীর হাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা থাকায় সাধারণ মানুষ আশায় আশায় অপেক্ষার প্রহর গুণছে। তারা আশা প্রকাশ করছে- সেনাবাহিনী দ্রুতই দেশের আইন-শৃঙ্খলায় অমূল পরিবর্তন আনবে এবং সাধারণ জনগণের সামগ্রিক সহযোগিতা নিয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে।
২০ অক্টোবর, ২০২৪।