পুরাণবাজারে আতঙ্কে অন্তঃস্বত্ত্বা নারী ও গর্ভের সন্তানের মৃত্যু

সম্পত্তিগত বিরোধে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা

এস এম সোহেল
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার ওসমানিয়া কামিল মাদ্রাসা এলাকায় সম্পত্তিগত বিরোধে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও পুলিশি অভিযানের আতঙ্কে নাসরিন (১৯) নামে অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২ জানুয়ারি) রাতে মাদ্রাসা রোড মধ্য শ্রীরামদী এলাকার মাদ্রাসার লিজকৃত সম্পত্তিতে বসবাসকারী বিউটি বেগমের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। নাসরিন দিনমজুর মো. শরীফ গাজীর স্ত্রী। এক বছর আগে তাদের বিয়ে হয়।
নাসরিনের নানী পেয়ারা বেগম জানান, পাশ^বর্তী আবুলের মেয়ে রেহানা, রাশিদা, শাহীনুর, জাহাঙ্গীর ও আলমগীর পরিবারের সাথে আমার মেয়ে বিউটির সম্পত্তিগত বিরোধ আছে। আগের এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন মেয়ের পরিবারকে ফাঁসানোর জন্য মাদক (৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট) একটি প্যাকেটে রেখে যায়। পুলিশ জানতে পেরে আমাদের ঘরে এসে আমার সামনে থেকেই ইয়াবাগুলো উদ্ধার করে। কিন্তু আমাদের সাথে কোন কথা না বলেই চলে যায়। ওই সময় অন্য কক্ষে আমার নাতনি নাসরিন প্রসব বেদনা অবস্থায় ছিল।
নাসরিনের মামা রাসেল ভূঁইয়া জানান, আমার ভাগ্নি নাসরিন এ ধরনের ঘটনার পরিস্থিতি মুখোমুখি এবং পুলিশের অভিযান দেখে ভয় ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরে তাকে ওই অবস্থায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওমর ফারুক সবুজ মৃত ঘোষণা করেন। আমার বোনের পরিবারকে যারা মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ রাজিব শর্মা জানান, আমরা গোপন সংবাদের মাধ্যমে ওসমানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি বাড়িতে মাদক আছে মর্মে অভিযান করি। ওই সময় প্রাপ্ত তথ্যে ওই ঘরের নির্দিষ্ট স্থান থেকে ৩৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করি। ওই ঘরের কেউ মাদক বিক্রেতা বিষয়টি আমাদের সন্দেহ হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। ঠিক ওই সময়ই ঘরের বাহিরে এসে আমরা অবস্থান করছিলাম। তখনই অন্ত:স্বত্তা ওই নারীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য কয়েকজন নিয়ে আসলে আমাদের সাথে থাকা অটোরিকশায় করে হাসপাতালে পাঠাই। অভিযানের সময় ওই কক্ষে অন্তঃস্বত্ত্বা কোনো নারীকে আমরা দেখিনি। কিন্তু তার নানী পেয়ারা বেগম ছিলেন।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওমর ফারুক সবুজ জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই নাসরিন নামে অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার সাথে থাকা পরিবারের লোকজন জানায় তার রক্তচাপ বেশি ছিল। মায়ের মৃত্যুর কিছু সময় পরে গর্ভে থাকা সন্তানেরও মৃত্যু হয়।

০৩ জানুয়ারি, ২০২৩।