স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুরে মাদক বিক্রির ভাগাভাগি ও এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষে শামিম গাজী (২৪) নামের এক নিরীহ পথচারী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ জুন) সকাল ৭টায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে সে মারা যায়।
এর আগে ২৯ জুন রাতে চাঁদপুর পুরাণবাজার সুইপার কলোনী মোড়ে স্থানীয় দু’গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে শামিমের উপর হামলা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় রাতে চাঁদপুর জেলা হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে রেফার করা হয়নঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে। ঢাকায় নেয়ার পর মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
নিহত শামিম গাজী পুরাণবাজার মধ্য শ্রীরামদি এলাকার তাজু সর্দারের সেজো ছেলে। শামিম চাঁদপুরের হোটেল গ্রান্ড হিলশায় রিসিপশনে চাকরি করতো এবং করোনার চিকিৎসকদের হোটেল সেবা দিত। লামিম নামের ৯ মাসের একটি মেয়ে রয়েছে তার।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল পুরাণবাজার ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহির খানের সাথে মাদক বিক্রির টাকা ভাগ নিয়ে স্থানীয় চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা হেলালের ঝগড়া হয়। পরে হেলালের পক্ষে ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত পাটওয়ারীর ছোট ভাই রাসেল পাটওয়ারী ও মাদক কারবারী হেলাল এবং জহির গ্রুপের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে জহির গ্রুপের সবুজ খান (২৪) নামের এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে রোববার (২৮ জুন) রাসেল গ্রুপের একজন কালু হিজড়াকে পেয়ে তাকে মারধর করে জহির গ্রুপ। মূলত ওই ঘটনার রেশ ধরেই সোমবার সন্ধ্যায় এ দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্য তুমুল মারামারি হয়। যার বলি হয় নিরীহ হোটেল কর্মচারী শামীম।
নিহত শামিমের বাবা তাজুল সর্দার জানান, আমার ছেলে হোটেল গ্রান্ড হিলশায় রিসিপশনে চাকরি করতো। প্রতিদিন সকালে ৮টায় কাজে যায়, আবার রাত সাড়ে ৮টায় বাড়ি ফিরে আসে। দুপুরের খাবার নিয়ে যায়। ঘটনার রাতে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে সে হোটেল থেকে ফিরছিলো।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরো জানান, আমার ছেলে দুই বছর হলো বিয়ে করেছে। তার লামিম নামে ৯ মাসের একটা মেয়ে রয়েছে। ওরা দু’পক্ষ মারামারি করে আমার নিরীহ ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরো জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত ম্যারকাটিজ রোড এবং মধ্য শ্রীরামদী কবরস্থান এলাকার দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদক বিক্রির ভাগ নিয়ে জহির, রাসেল ও হেলালের বিরোধেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দু’পক্ষ ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র ও টর্চলাইট নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া করে এবং বৃষ্টির মত কাচের বোতল ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এসময় ওসমানিয়া মাদরাসা ও সুইপার কলোনি এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ ঘটনায় আশেপাশের বেশকিছু দোকানপাট ও বাড়িঘর এবং অটোবাইক হামলার শিকার হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানিকের মুদি দোকান। এছাড়া হামলার শিকার হয়ে হোটেল কর্মচারী নিরীহ শামীম নিহত হয়েছে।
খবর পেয়ে সদর মডেল থানার ওসি নাসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে এবং পুরানবাজার ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহিদ পারভেজ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং শান্ত রয়েছে। অপরাধীদের ধরার জন্য পুলিশ রেইড দিচ্ছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু মার্ডার হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে মামলা করা হয়নি।
৩০ জুন, ২০২০।