ফরিদগঞ্জে নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়ক নির্মাণ

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
ফরিদগঞ্জে নির্মাণাধীন একটি সড়কে নিম্নমানের ইট ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দিনের বেলায় লোকজনকে দেখানোর জন্য কিছুটা ভালো মানের ইট রাস্তার ফেললেও রাতের আঁধারে সেই ইটের সাথে মিশানো হচ্ছে পঁচা ও নম্বরবিহীন ইট। এছাড়া ওই সড়কটিতে পানি জমে থাকাবস্থায় কাঁদা মাটির উপর বালি পালানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ঠিকাদারের লোকজনকে বললেও তারা কর্ণপাত করছে না। ঘটনাটি উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের আলোনিয়া বাজার হতে এখলাশপুর-রায়পুর সড়কের। ইতোমধ্যেই সড়ক নির্মাণে অনিয়মের চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মানুষজন।
সরেজমিন ও তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে সিসিবি প্রকল্পের আওতায় ৮৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলার চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়নের এখলাশপুর-রায়পুর সড়কের আলোনিয়া বাজার থেকে মালি বাড়ির কালভার্ট পর্যন্ত ১০২০ মিটার অংশের কার্পেটিংয়ের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম আই ট্রেডিং এণ্ড কোং। গত সেপ্টেম্বর থেকে সড়কের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় লোকজন জানান, সড়কের কাজ শুরু থেকেই নানা অনিয়ম শুরু হয়। বৃষ্টিতে ভেজা কাঁদা মাটি রাস্তা থেকে না সরিয়ে তার উপর বালি পালিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। তাদের তখন বাঁধা দেওয়া হলেও তারা শোনেননি। তারপর থেকেই শুরু হয় সড়কে ইটের কাজ, তারা নিম্নমানের ইট ব্যবহার করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ মানুষজন তাদের বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনকে দেখানোর জন্য দিনের বেলায় কিছুটা ভাল মানের ইট সড়কে ফেলা হয়। কিন্তু রাত নামলেই তারা পঁচা ও নষ্ট ইট ওই ইটের সাথে মিশিয়ে দেয়।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন জানান, গত বেশ কয়েকদিন ধরে তিনিসহ লোকজন সড়কে ফেলা নষ্ট ও পঁচা ইট উঠিয়ে নিতে বাধ্য করেছেন। সাইটে থাকা লোকজনকে বারংবার সড়কের কাজে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করতে নিষেধ করলেও তারা শুনছেন না।
মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিনও একই অভিযোগ করে বলেন, নিম্নমানের ইট হাত দিয়ে ধরলেও পাউডার হয়ে যায়। এই ইট দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে কয়েক মাসের মধ্যেই সড়ক নষ্ট হয়ে যাবে।
ইউপি সদস্য আলী হোসেন জানান, তারা কাদা মাটির উপর বালি ফেলছে, যা পরিপূর্ণ অনিয়মের মধ্যে পড়ে। এখন আবার শুরু করছে নিম্নমানের ইট ব্যবহার তাদের অনেকবার আমি বাঁধা দিয়েছি, তারা শোনেনি। দিনে কাজ চলমান সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কেউ থাকে না। তবে রাতের আঁধারে ইট-বালি এনে দিয়ে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মানুষজন।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মিরাজ জানান, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ পেয়ে সরেজিমন গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওই কাজের দায়িত্বরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ নিয়ে কয়েকটি ইট বুক বরাবর উপর থেকে মাটিতে ফেলে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে কাজের অনিয়ম ঢাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, সড়কের নির্মাণে অনিয়ম বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমআই ট্রেডিং এণ্ড কোং এর মালিক আলমগীর গাজী কিছু ইট খারাপ পড়েছে স্বীকার বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই সড়কটি নির্মাণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বো। আপনার কাজের অনিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কথা বলেননি।

০৪ ডিসেম্বর, ২০২২।