ফরিদগঞ্জে ৫৫ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ভারে রুগ্ন শিক্ষা কার্যক্রম

 

আ. ছোবহান লিটন :

ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ চররামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধ যুগ ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষকের সবাই নারী। সহকারী শিক্ষক হালিমা ইয়াসমিন ২০১২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বিদ্যালয়টিতে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বন্ধ রয়েছে অপর শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়াও। কোন পিয়ন না থাকায় বিদ্যালয় খোলা, বন্ধ, ঘণ্টা পেটানো থেকে সব কাজই করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। প্রধান শিক্ষককে স্কুলের কাজে বাইরে গেলে বিদ্যালয়ে থাকা তিনজনই পুরো স্কুলটি পরিচালনা করেন। কোন কারণে কেউ অসুস্থজনিত কারণে ছুটিতে থাকলে বিদ্যালয়ে শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুসারে, উপজেলার মোট ১৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে কার্যক্রম। তাই ভারপ্রাপ্তের ভারে রুগ্ন হয়ে পড়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। সহকারী শিক্ষকরা অতিরিক্ত সুবিধা না পেয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে অনিহা প্রকাশ করেন। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে ১৩টি।

প্রধান শিক্ষক শূন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- বালিথুবা পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের শোশাইরচর, সানকিসাইর, পশ্চিম দেইচর সকদিরামপুর ও দক্ষিণ রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সুবিদপুর পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের ফণিসাইর, দিগধাইর, লক্ষ্মীপুর, সুবিদপুর, মনতলা, সুড়ঙ্গসাইল ও তেলিসাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গুপ্টি পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের গল্লাক বাজার, গুয়াটোবা, ভোটাল, শ্রীকালিয়া, আষ্টা, বালিমুড়া, বৈচাতলী, ষোলদানা ও সাইসাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাইকপাড়া উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব ভাওয়াল, পাইকপাড়া বালিকা, পূর্ব জয়শ্রী, দক্ষিণ শাশিয়ালী, দক্ষিণ নদোনা ও ইছাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গোবিন্দপুর উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমথুরা, পূর্ব ধানুয়া, পূর্ব গোবিন্দপুর, রামপুর বাজার ও হাওয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চরদুঃখিয়া পূর্ব ও পশ্চিম ইউনিয়নের ফিরোজপুর, পশ্চিম চরদুঃখিয়া. দক্ষিণ লড়াইরচর, উত্তর সন্তোষপুর, দক্ষিণ সন্তোষপুর, পূর্ব সন্তোষপুর, পূর্ব আলোনিয়া, উত্তর আলোনিয়া ও একলাশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ও ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব বড়ালি, চরহোগলা, পশ্চিম পোয়া, দক্ষিণ চররামপুর, পশ্চিম হর্ণি, বিশকাটালি ও উত্তর গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রূপসা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব বদরপুর, ভাটেরহৃদ, রুস্তমপুর ও দক্ষিণ বদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকরাই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এতে ব্যাঘাত ঘটছে শিশুদের পাঠদান কার্যক্রমের। সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়ন।

শিক্ষক পূনর্বিন্যাস না হওয়ার কারণেও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কোন কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বেশি। আবার কোথাও শিক্ষক খরায় পাঠবঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক বেশি রয়েছে বড়ালী, গুয়াটোবা, দক্ষিণ চর-রামপুরসহ বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আবার শিক্ষক সংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রামপুর বাজার, পূর্ব বড়ালী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান।

বড়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি শিফ্ট চালু থাকায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়টির অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দীন কবির জানান, ৭/৮ বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি না হওয়া এবং প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব নিয়ে মামলার ফলে সৃষ্ট জটিলতায় শিক্ষক সংকট সৃষ্টি হয়েছে ।

উপজেলায় সদ্য যোগদান করা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরউজ্জামান খান জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।