ফরিদগঞ্জ পৌর নির্বাচনের প্রচারণা নবীনদের দখলে

নবী নোমান
৯.৭৫ কিলোমিটার আয়তন ও প্রায় ৩৫ হাজার জনসংখ্যার বসবাস ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় নির্বাচনী ডামাঢোল বেজে ওঠেছে আপন গতিতে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পৌরসভার সদর এলাকায় প্রতিদিন কোন না কোন প্রার্থীর মোটর শোভাযাত্রা কিংবা মিছিল-মিটিংয়ে সরগরম থাকছে। চায়ের দোকানে চায়ের আড্ডায় নির্বাচন কেন্দ্রিক আলোচনা কখনো মৃদু কিংবা গলাবাজির ঝড় বইতে থাকে।
সবার শেষ কথা, কে হচ্ছে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার আগামি নগর পিতা? তবে এটা নিশ্চিত সরকারি এবং বিরোধী দলীয় প্রতীক যার কপালে জুটবে হয়তো বা সে’ই হবে এই পৌরসভার নগর পিতা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত প্রায় এক দেড় মাসে যাদের দৌড়-ঝাঁপে এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার মাঠে স্বদর্পে দখল করে রেখেছেন তারা সবাই নবীন প্রার্থীরা। এই ভিড়ে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দুই শিবিরের প্রবীণ প্রার্থীরা মাঠে নাই বলে চলে। সবমিলে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার প্রচারণার মাঠ এখন নবীন সম্ভাব্য প্রার্থীদের দখলে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল মিলে প্রায় দুই ডজন তরুণ ও নবীন সম্ভাব্য মেয়র পদে প্রার্থীর প্রচারে সরব পৌর নির্বাচনী অঙ্গন।
যে কারণে প্রবীণরা মাঠে নেই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পৌরানিক যুগের নির্বাচনে প্রচার – প্রচারণা প্রযুক্তি বা আধুনিক পদ্ধতির প্রচারণার ঝড়ের কাছে পরাস্ত। তাছাড়া অর্থ ও নির্বাচনী মাঠ সরগরমের জন্য ওঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকরা প্রবীণের চেয়ে নবীনদের পক্ষে বেশি। অনেকে দলীয় প্রতীক প্রাপ্তির কথা চিন্তা করে অপেক্ষা করছেন। এছাড়াও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রবীণদের চেয়ে নবীনরা নানাভাবে এগিয়ে থাকার কারণে এই যুগের নির্বাচনের মাঠে প্রচার-প্রসারে নবীনরা এগিয়ে। সর্বশেষ ফরিদগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তরুণ প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চমকে এখন বিশেষ করে প্রধান দুই দলের অনেক প্রবীণ প্রার্থী আগাম প্রচার করা থেকে বিরত রেখেছেন। দল তাদের দলীয় কর্মকান্ডে যদি দলীয় প্রতীক তাদের দেয়ার নিশ্চয়তা দেয় তা হলে তারা নির্বাচনী প্রচারে মাঠে থাকবে এমনও অনেক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আর এই সুযোগে তরুণ বা নবীন সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারের মাঠ দখল করে রেখেছেন।
গত বেশ কিছু দিন থেকে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের যে প্রার্থরা মাঠে আপন শক্তিতে প্রচার-প্রচারণায় চষে বেড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম রিপন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ইসলাম সাউদ, আকবর হোসেন মনির, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আজমুর বেগম, যুবলীগ নেতা খলিলুর রহমান, আব্দুল গাফ্ফার সজিব, মাকসুদুর বাসার বাধন পাটওয়ারী।
এদের মধ্যে কেউ দলের প্রধানের, স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছবি সম্বিলিত ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও প্লেকার্ড নিয়ে এবং সাঁটিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন মোটর শোভাযাত্রা ও মিছিল মিটিং করে যাচ্ছেন। জেলা ও কেন্দ্রিয়ভাবে জোর লবিং করচ্ছেন দলীয় প্রতীক পাওয়ার জন্য। বর্তমান মেয়র মাহফুজ তার মেয়াদে উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য নৌকা প্রতীক পাওয়ার আশা নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারে নেমেছেন। অপরদিকে বয়সে বেশি, তবে দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই তাদের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুবেদার মৃত আব্দুল করিম মিয়াজীর ছেলে মো. কামাল মিয়াজীও প্রতিদিনের প্রচারে মাঠে আছেন। তিনিও তার দলীয় নেত্রীর মূল্যায়নের অপেক্ষা আছেন।
বিএনপি’র সম্ভাব্য তরুণ ও নবীন প্রার্থীরা হলেন পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ছাত্রনেতা আমানত গাজী, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন, যুবদল নেতা ইমাম হোসেন, এসএম টুটুল পাটওয়ারী নাজিম উদ্দীন, আব্দুল খালেক পাটওয়ারী। তারা বিভিন্নভাবে তাদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা ও কেন্দ্রিয়ভাবে দলীয় প্রতীক পাওয়ার জন্য জোর লবিং করে যাচ্ছেন তারা। তবে নানা কারণে তারা বড় ধরনে শোভাযাত্রা বা মিছিল মিটিং করা থেকে তারা বিরত থাকছেন।
তবে, প্রধান দুই দলের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অনেকে ভীন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন, সেটিও শোনা যাচ্ছে। তারা দলীয় প্রতীকের নিশ্চয়তা ও আগামা প্রচারে দুর্বল হতে যাচ্ছে না অনেকেই। তারা সাঁফ জানিয়ে দিয়েছেন, দল তাদের আগের ত্যাগ ও আবদানের কথা চিন্তা করে দলীয় প্রতীক তাদের অনুকূলে আসলে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ারও ইঙ্গিত করেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনে দায়িত্বে থাকা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী অন্যতম। তিনি বিভিন্ন সভা সেমিনারে জানিয়ে দিয়েছেন, দলীয় নেত্রী তাকে দলীয় প্রতীক দিলে নির্বাচন করবেন। অপরদিকে, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও গত নির্বাচনের দলীয় প্রতীক পাওয়া হারুন অর রশীদ জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের আগে মাঠে নামতে চাচ্ছে না। দলীয় প্রতীক পেলে নির্বাচন করবেন তিনি। অপরদিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর প্রশাসক সফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী নির্বাচনী পরিবেশ ফিরে আসলে নির্বাচন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সাবেক পৌর মেয়র বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মঞ্জিল হোসেনেরও একই কথা পরিবেশ অনুকূলে থাকলে নির্বাচন করবেন। তবে সেটি স্বতন্ত্রও হতে পারে।
২০ নভেম্বর, ২০২০।