স্টাফ রিপোর্টার
ফরিদগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল তথা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন শারীরিকভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে চালান হয় (কিল-ঘুষির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা) রোগীদের চিকিৎসা সেবা! যা’ নিয়ে পুরো ফরিদগঞ্জবাসীর মধ্যে যেমন আতংক বিরাজ করছে, তেমনি এলাকায় বিভিন্ন অভিভাবক ও যুবকদের মধ্যে উত্তেজনা ও মারাত্মক ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগী গতকাল রোববার বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত শুক্রবার একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন পৌর এলাকার সাফুয়া গ্রামের আ. রশিদ (৬০) নামে বৃদ্ধ।
জানা যায়, শুক্রবার রাতে ফরিদগঞ্জ পৌর সাফুয়া এলাকার আ. রশিদ (৬০) নামের এক বৃদ্ধ হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যান। তার অবস্থার খারাপ দেখে পরিবারের লোকজন রাত আড়াইটার দিকে অজ্ঞান অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন আ. রশিদকে। এ সময় ডিউটিতে থাকা স্যাকমো অলি আহমদ দু’গালে ও মাথায় কিল-ঘুষি দিয়ে জ্ঞান হারানো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন রোগী আ. রশিদের স্ত্রী জাহানারা বেগম। তিনি আরো জানান, প্রথমে আমরা হাসপাতাল গেটে এসে দেখতে পাই গেট বন্ধ, পরে আমরা স্থানীয় একজন সংবাদকর্মীকে জানালে সে হাসপাতালের ইউএইচওকে ফোন করে বলার পর গেট খুলে দেয়া হয়। পরে রোগীর জন্য হুইল চেয়ার চাইলেও চেয়ার দেওয়া হয়নি। পরে আমরা হুইল চেয়ার এনে রোগীকে চেয়ারে বসানোর জন্য সহযোগিতা চাইলে সহযোগিতা না করে চলে যায় রাতে ডিউটিতে থাকা নাইট গার্ড। আমরা ইমারজেন্সী কক্ষে নিয়ে রোগীকে শোয়ানোর পর স্যাকমো অলি আহমদ ক্ষিপ্ত হয়ে এসে রোগীর দু’গালে ও মাথায় কিল-ঘুষি দিয়ে বলে, বড় স্যারকে ফোন দিলি কেন? আমরা নিরুপায় হয়ে হাসপাতালে আসলাম অথচ আমাদের রোগীকে আমাদের সামনেই এভাবে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও প্রহার করা হলো।
এ বিষয়ে সংবাদকর্মী জাকির হোসেন সৈকত জানান, আমি রাতে ১০/১৫ বার হাসপাতালের ইমারজেন্সীতে ফোন দিলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে রাতে ইউএইচওকে ফোন করে বলি রোগী হাসপাতাল গেটে দাঁড়িয়ে আছে, দেখার জন্য। তারপর তারা রোগীকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেন।
এ বিষয়ে গেট বন্ধ থাকার সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের নাইট গার্ড বলেন, গেট বন্ধ ছিল, তবে তালা খোলা। লকআপ হ্যান্ডেল লাগানো ছিল। তাই খুলতে একটু দেরী হয়েছে।
এ বিষয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী হাসপাতালের ইউএইচও প্রশ্ন করলে তিনি রোগীর স্ত্রী জাহানারা বেগম ও স্যাকমো অলি আহমাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অলি রোগীকে কিল- ঘুষি দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমার ভুল হয়েছে। আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ইউএইচও মোহাম্মদ আশ্রাফ আহমেদ চৌধুরী জানান, ঘটনার বিষয় জানলাম। তারপরও আমি সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সত্যতার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি আরো জানান, আমি ফোন দিয়েছি ইমাজেন্সীর দায়িত্বে থাকা ডা. মাসুদকে। আমি তো স্যাকমো অলিকে ফোন দেইনি। সে কি করে জানলো?
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। আমি এ বিষয়ে ইউএইচওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলবো।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সিভিল সার্জন ডা. সাখায়াত উল্লাহ্ জানান, আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা যাচাইপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
২৩ আগস্ট, ২০২১।