বহরিয়ায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুরের বহরিয়ায় বড় বাড়িতে যৌতুকের জন্য স্ত্রী সাথী আক্তারকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করার অভিযোগের ঘটনায় স্বামী শরীফ খানকে গ্রেফতার করেছে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে আসামি শরীফ খানকে চাঁদপুর আদালতে পাঠালে আদালত বিকেলে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
গত সোমবার সন্ধ্যার পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোস্তফা কামাল ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে সদর উপজেলার বহরিয়া বড় খান বাড়ি এলাকা থেকে সুকৌশলে শরীফ খানকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। আসামি শরীফ খান তার স্ত্রীকে হত্যা করার পর গত ৩ মার্চ থেকে সে ১ মাস ১০ দিন বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে থাকে। এরই মধ্যে পুলিশও তাকে আটক করার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের সোর্স ব্যবহার করে কয়েক দফা অভিযান চালালে শরীফও সুকৌশলে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। অবশেষে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বহরিয়া এলাকার একটি বাড়ি থেকে ঘরের তালা ভেঙে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা গেছে, পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে স্ত্রীর মাথায় স্বামী শরীফ হোসেন খান ইট দিয়ে আঘাত করে ও গলাটিপে এক সন্তানের জননী গৃহবধূ সাথী আক্তার (২৪) কে যৌতুকের জন্য হত্যা করার অভিযোগ এনে চাঁদপুর মডেল থানায় শরীফসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি নিহতের মা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে গত ৪ মার্চ।
ঘটনাটি ঘটে গত ৩ মার্চ সন্ধ্যায় সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া এলাকার মোখলেছ খান নামক বড় খানবাড়িতে।
এ ঘটনায় গৃহবধূর মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে নিহতের স্বামী শরীফ খান, তার বোন রাবেয়া বেগম ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী হালিমা বেগমকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করে চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনার পর এলাকাবাসী হত্যাকারী স্বামী শরীফকে আটকের পর মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার চেস্টা কালে ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান টিটু শরীফকে এলাকাবাসীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমান সয়য় পর্যন্ত টিটুর হস্তক্ষেপে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, নিহত সাথী আক্তারের স্বামী শরীফ খান এর আগেও একটি বিয়ে করে পশ্চিম রামদাসদী দোকানঘর এলাকার রফিক মল্লিকের মেয়ে রোকেয়া বেগমকে। সে সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। শরীফের নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে দুই সন্তান নিয়ে তখন প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। গত ৩ বছর আগে শরীফ খান চান্দ্রা এলাকার বাখরপুর পাটওয়ারী বাড়ির মিজানুর রহমানের মেয়েকে বিয়ে করে। সাথীর সংসারে দুই বছর বছরের সুমনা নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত সাথীর বাবা মিজানুর রহমান জানান, বিয়ের সময় ও তার পর শরীফকে ৭ বারে যৌতুক বাবদ শরীফকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যবসা করার জন্য দেওয়া হয়। গত ২ মার্চ যৌতুকের জন্য সাথীকে শরীফ মাথায় এবং শরীরে ইট দিয়ে বহুবার আঘাত করেছে। আঘাত করার পর সাথী বিষয়টি ফোন করে তার বাবা ও মাকে বিষয়টি জানিয়েছে।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিব হাসান চৌধুরী ঘটনার পরই জানান, মরদেহের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, দীর্ঘদিন চেষ্টার পর মডেল থানার এসআই মোস্তফা কামাল আসামি শরীফ খানকে গ্রেফতার করেছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাটি জানার পর-পর আমি রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এ ব্যাপারে নিহতের মা ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে নিহতের স্বামী, তার বোন ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আসামি করে যৌতুকের জন্য হত্যা করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ এনে মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

১৪ এপ্রিল, ২০২১।